পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বকৃৎ বিশ্ব্ধৃক্ চ ত্বং রসনা-মানদণ্ডধৃক্।।

 যত আছ দেবগণ,      ল'য়ে নিজ প্রহরণ,
       আইসহ আমার পশ্চাতে।
 শুনিবারে উপহাস,      তিলেক না কর ত্রাস,
        মম বন পোড়ায় কি মতে।।
 সহায় জনের সহ,      বিনাশিব হব্যবাহ,
       এত বলি চলে বজ্রপাণি।
 সহ পরিবার যত,      উচ্চৈঃশ্রবা ঐরাবত,
       চারি মেঘ চৌষট্টী মেদিনী।।
 হংসারূঢ় মহামতি,      চলিল ধনের পতি,
       ভয়ঙ্কর গদা করি করে।
 মহিষেতে মৃত্যুনাথ,      লোকান্তক দণ্ডহাত,
       চলিল সহিত সহচরে।।
 নিজ নিজ যানারোহ,      চলিল যতেক গ্রহ,
       অষ্টবসু অশ্বিনীকুমার।
 পবন ধনুক ধরি,        মৃগে আরোহণ করি,
       ইন্দ্র সহ কৈল আগুসার।।
 চড়িয়া মকরধ্বজ,      চলিল দেবের রাজ,
        পাশ অস্ত্র শোভে সব্যকরে।
 শিখিপৃষ্ঠে আরোহণ,      শক্তিধর ষড়ানন,
       চলিল খাণ্ডব রাখিবারে।।
 এই মত গুটি গুটি,      দেবতা তেত্রিশ কোটি,
       গেলেন বনরক্ষা কারণ।
 আইল গরুড় পক্ষী,      সঙ্গে লক্ষ লক্ষ পক্ষী,
       রক্ষা হেতু নিজ জ্ঞাতিগণ।।
 চিত্তে বহু অনুরাগ,      আইল অনন্ত নাগ,
        কোটি কোটি ভুজঙ্গ সংহতি।
 আইল তক্ষক সেনা,      ধরে শত শত ফণা,
       বিষবৃষ্টি পূর্ণ কৈল ক্ষিতি।।
 যক্ষ রক্ষ ভূত দানা,     সহ নিজ নিজ সেনা,
       নানা অস্ত্র শূল শেল লৈয়া।
 এমত লিখিব কত,      ত্রিভুবনে আছে যত,
       রহে সর্ব্ব আকাশ যুড়িয়া।।
 তবে দেব পুরন্দরে,      আজ্ঞা দিল জলধরে,
       বৃষ্টি করি নিবার অনল।
 আজ্ঞামাত্র অতিবেগে,     সম্বর্ত্তাদি চারিমেঘে,
       মুষলধারায় ফেলে জল।।
 প্রলয়কালেতে বৃষ্টি,      যেন মজাইতে সৃষ্টি,
       শিলা জলে ছাইল আকাশ।
 মহাঘোর ডাক ছাড়ে,    ঝনঝনা ঘন পড়ে,
       তিনলোকে লাগিল তরাস।।
 দেখি পার্থ মহাবল,      না পড়িতে বৃষ্টিজল,
       শোষক বায়ব্য অস্ত্র এড়ে।
 শূন্যে অস্ত্র উঠে রোষে,   শোষকে সলিল শোষে,
       বায়ব্যে সকল মেঘ উড়ে।।
 মেঘ হৈল পরাজয়,      অতিক্রোধী ইন্দ্র হয়,
       বজ্র হানে শ্রীকৃষ্ণ অর্জ্জুনে।
 জানি নর-নারায়ণ,      বজ্র না চলিল রণে।
       বাহুড়ি আইল ইন্দ্রস্থানে।।
 তবে ক্রোধে দেবরাজ,     অস্ত্রব্যর্থ পায় লাজ,
       উপাড়িয়া আনিল মন্দর।
 হুহুঙ্কার শব্দ ছাড়ে,      যেন স্বর্গ ছিঁড়ে পড়ে,
       আইসে মন্দর গিরিবর।।
 ইন্দ্রপুত্র দিব্য শিক্ষা,      ভরদ্বাজ পুত্রদীক্ষা,
       অজেয় গাণ্ডীব ধরে ধনু।
 শীঘ্রহস্তে ধরে বাণ,      গিরি করে খানখান,
       চূর্ণ করে যেন ক্ষুদ্র রেণু।।
 পর্ব্বত ফেলিল ছেদি,     চমকিত জন্তুভেদী,
       নানা অস্ত্র করে বরিষণ।
 অনেক করেছি রণ,      নিবারিতে হুতাশন,
       কে করিবে তাহার গণন।।
 বায়ু অগ্নি ভিন্দিপাল,     ইন্দ্রজাল ব্রম্ভজাল,
       পরশু মুদ্গর শেল শূল।
 চক্রবাণ জাঠাজাঠি,      নানা অস্ত্র কোটি কোটি,
        অর্দ্ধচন্দ্র তোমর ত্রিশূল।।
 তবল সাবল সাঙ্গী,      ক্ষুরপা বেণব টাঙ্গী,
        কুঠার পট্টিশ বহুতর।
 ভল্ল শেল শব্দভেদী,      কুন্তখড়গ রিপুচ্ছেদী,
        সুচীমুখ খট্টাঙ্গ বিস্তর।।
 যেন বৃষ্টি ঘোর ঘনে,     ইন্দ্র ফেলে অস্ত্রগণে,
        সব নিবারেণ ধনঞ্জয়।
 অগ্নিতে পতঙ্গ পড়ে,      যেন ভস্ম হ'য়ে উড়ে,
        ক্ষণমাত্রে হৈল সব ক্ষয়।।