পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

স্যাটিনের কাপড়ে সেজেছে! ক্রমে চারদিক আলোতে আলোময় হয়ে উঠল; অন্ধকারের ভয় দেখতে-দেখতে কোথায় পালাল; আর অমনি কত পাখি, কত জীব-জন্তুই না বনে ছুটোছুটি আরম্ভ করলে! লাল-টুপি-মাথায় কাঠঠোকরা ঠকাস-ঠকাস গাছের ডালে ঘা দিতে বসে গেল, কাঠবেরালি অমনি খোপ ছেড়ে গাছের তলায় বসে কুটুস-কুটুস বাদাম ছাড়াতে লেগে গেল; গাং শালিক, গো-শালিক, ছাতারে, গাছের তলায় নেমে শুকনো পাতা উল্টে-উল্টে কিড়িং ফড়িং ধরে-ধরে বেড়াতে লাগল; আগ-ডালে বসে শ্যামা-দোয়েল শিস দিতে আরম্ভ করলে। রিদয়ের মনে হল সূর্য যেন সব পশু-পাখি কীট-পতঙ্গদের জাগিয়ে দিয়ে অভয় দিতে থাকলেন—রাত পালিয়েছে, তোরা ঘর ছেড়ে বার হ, আমি এসেছি, ভয় নেই!

 রিদয় শুনলে মেঘনার চরে হাঁসেরা ডাকাডাকি, হাঁকাহাঁকি লাগিয়েছে, দল একত্র হচ্ছে। চকা-নিকোবর হাঁকলে—“মানস-সরোবর! ধৌলাগিরি! আও আও আও!” তারপর রিদয় দেখলে তার মাথার উপর দিয়ে নিকোবরের পুরো দল উড়ে চলল—খোড়া হাঁসটি সুদ্ধ! রিদয় তাদের একবার ডাক দিলে, কিন্তু এত উপর দিয়ে হাঁসেরা চলেছে যে তার ডাক শুনলে কি-না বোঝা গেল না—উড়তে-উড়তে আকাশে মিলিয়ে গেল। রিদয় স্থির করলে হাঁসেরা নিশ্চয়ই দেখেছে শেয়ালে তাকে খেয়েছে। সে হতাশ হয়ে আকাশে চেয়ে রইল। কিন্তু এত দুঃখেও সকালের আলো আর বাতাস, সে যেখানটিতে বসে আছে সেই ডালটি সোনার রঙে রাঙিয়ে ঝাউ-পাতার মধ্যে দিয়ে চুপিচুপি তাকে এসে বলতে থাকল—“ভয় কি? দিন হয়েছে—সূর্য উঠেছেন, আমরা থাকতে কিসের ভয়!” ঠিক সেই সময় কমলা-লেবুর রঙের সাজ পরে হলুদবর্ণ যে সূর্য আমতলির মাঠে রোজ-রোজ রিদয়কে দেখা দিতেন, তিনি চাঁদপুরের জঙ্গলের উপরে দেখা দিলেন।


৫৩