পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

আমি কাজ করব? আজ রাত্তিরটা না ঘুমিয়ে নিলে আমি কিছু কাজ পারব না, গা-হাত-পা টাটিয়ে গেছে।”

 “খোলো আভি!” বলে ডোম রিদয়কে ঝাপটা মেরে পেঁটরার গায়ে ঠেলে দিলে; রিদয় গোঁ হয়ে পেঁটরা ধরে নেড়ে বললে—“বাবা, যে মরচে-ধরা তালা, এ তো খোলা সহজ নয়, আজ খেয়ে-দেয়ে গায়ে জোর হোক, কাল তখন দেখা যাবে!”

 ডোম রেগে রিদয়ের গায়ে এক ঠোকর বসিয়ে বললে—“খোল্‌ বলছি!”

 রিদয় এবারে আর রাগ সামলাতে পারলে না, ডোমকে এক থাপ্পড় কসিয়ে কোমর থেকে ছুরি বার করে বললে—“ফের বজ্জাতি, পাজি কোথাকার!”

 ডোমকাক রাগে আর চোখে দেখতে পাচ্ছে না—“তবে রে” বলে সে রিদয়ের উপরে যেমন ঝাঁপিয়ে পড়ল, অমনি রিদয় ছুরিটা তার চোখে বসিয়ে দিলে। ডোমকাক দু’বার ডানা ঝটপট করেই অক্কা পেলে।

 “হত্যা হুয়া, হত্যা হুয়া,” বলে শেয়াল চেঁচাতে লাগল, “ক্যা-ক্যা” বলে কাকরা গোলমাল করে তেড়ে এল। ঢোঁড়া বোকা সেজে কেবলি রিদয়কে আড়াল করে-করে ডানা ঝাপটাতে লাগল, যেন কতই রেগেছে এইভাবে। রিদয় বিপদ গুণে পেঁটরাটা জোরে টেনে খুলে তার মধ্যে লুকোবার চেষ্টা করতে লাগল। পেঁটরাটা কিন্তু টাকায় পয়সায় ঠাসা, তার মধ্যে জায়গা নেই দেখে দু-চার মুঠো পয়সা বাইরে ছড়িয়ে ফেললে!

 এতক্ষণ কাকরা হট্টগোল করছিল যেন কাঙালী বিদেয়ের ভিড় লাগিয়েছে। পয়সা পড়তে সবাই ছোঁ দিয়ে এক-একটা তুলে বাসার দিকে দৌড়—চকচকে পয়সা পেয়ে তারা রাজা, রাজহত্যা সব কথাই ভুলে গেল।

১৮৭