পাতা:কোর্‌-আন্‌ শরীফ-ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন.djvu/৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহাম্মাদের নিকট যে কোর-আন প্রকাশিত হইয়াছিল, অবিকল তাহাই এখনও মুছলমানদিগের মধ্যে প্রচলিত আছে, তাহার কুত্রাপি বিন্দু বিসর্গেরও পরিবর্তন ঘটে নাই, ভবিষ্যতে তাহার কোন সম্ভাবনাও নাই । জগতের ধৰ্ম্মগ্রন্থগুলির ইতিহাসে ইহা কোর্-আনের একটি গৌরবজনক বৈশিষ্ট্য। সেইজন্য সার উইলিয়ম মুইরের ন্যায় প্রতিকুল সমালোচক ও অবশেষে স্বীকার করিতে বাধ্য হন যে, “There is probably no other book which has remained twelve centuries with so pure a text .”

কোর-আন সৰ্ব্বপ্রথমে হজরত আবু বকরের সময় লিখিত হইয়াছিল বলিয়া একটা সাধারণ ধারণ প্রচলিত আছে। অনেকে আবার তৃতীয় খলিফা হজরত ওছমানকে "জামেউল্‌-কোবু-আন" বা কোর-আন-সঙ্কলক উপাধি দিয়া থাকেন। এই ধারণাগুলি সম্পূর্ণ নিভুল নহে। হজরত মোহাম্মাদের সময় কোর-জান লিখিত হইয়াছিল বিভিন্ন চামড়ার টুকরার এবং প্রস্তর ও অস্থিখণ্ড প্রভৃতির উপর। হজরত আবু-বক্র স্থবিজ্ঞ ও স্বনিপুণ লিপিকারদিগের দ্বারা সেগুলিকে একখণ্ড পুস্তকে, যথাযথ তরতীব অনুসারে, নকল বা সঙ্কলন করাইয়াছিলেন । তৃতীয় খলিফা হজরত ওছমানের সময় এছলাম ধৰ্ম্ম বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত হইয়া পড়ে। সেই সময় তিনি হজরত আবু বক্রের সঙ্কলনের কয়েকখানা নকল এছলাম-শাসিত বিভিন্ন জনপদে সরকারীভাবে পঠাইয় দেন মাত্র ।

ভারতবর্ষে পাশী, উর্দু এবং ( সম্ভবত: ) ব্ৰজভাষায় কোর-আনের অনুবাদ তইয়াছে বহু যুগ পূৰ্ব্বে । কিন্তু তিনকোটি মুছলমানের মাতৃভাষা যে বাংলা, তাহাতে কোর-আনের অনুবাদ প্রকাশের কল্পনা ১৮৭৬ খৃষ্টাব্দ পর্য্যস্ত এদেশের কোন মণীষীর দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে পারে নাই। তখন আরবী পার্শী ভাষায় সুপণ্ডিত মোসলমানের অভাব বাংলা দেশে ছিল না। তাঁহাদের মধ্যকার কাহারও কাহারও যে বাংলা সাহিত্যের উপরও যথেষ্ট অধিকার ছিল, তাহাদের রচিত বা অনুবাদিত বিভিন্ন পুস্তক হইতে তাহার অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু এদিকে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ তাহাদের একজনেরও ঘটিয়া উঠে নাই ! এই গুরু কৰ্ত্তব্যভার বহন করার জন্য সুদৃঢ় সঙ্কল্প নিয়া সৰ্ব্বপ্রথমে প্রস্তুত হইলেন বাংলার একজন হিন্দু সস্তান, ভাই গিরীশচন্দ্র সেন—বিধান-আচাৰ্য্য কেশবচন্ত্রের নির্দেশ অনুসারে । গিরীশচন্দ্রের এই অসাধারণ সাধন ও অনুপম সিদ্ধিকে জগতের অষ্টম আশ্চর্ষ্য বলিয়া উল্লেখ করা যাইতে পারে ।

বাংলা ও আরবী, দুইটা পরস্পর বিপরীত ধাতুসম্পন্ন ভাষা। তাহার উপর আরবী সাহিত্যের অসাধারণ বৈশিষ্ট্য। সুতরাং বাংলা ভাষায় আরবী পুস্তকের সঠিক অনুবাদ নাবান যে কি দুরূহ ব্যাপার, এই পথের পথিকরাই সম্যকভাবে তাহার