পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাটোয়া।
২৭

সহস্র সহ মহারাষ্ট্রীয় অশ্বারোহী পঙ্গপালের মত বাঙ্গলাদেশের বুকের উপর ছুটিয়া আসিতে লাগিল। বাদশাহ আরঙ্গজীব একদিন যাহা দিগকে “পার্বত্য-মূষিক’ বলিয়া উপহাস করিতেন, তোষামোদপরায়ণ পারিষদগণ যাহাদিগকে পিপীলিকাবৎ নখাগ্রে টিপিয়া মারিবেন বলিয়া আস্ফালন করিতেন, সেই মহারাষ্ট্রবল কঙ্কণ প্রদেশের গিরিগহবরে অধিকদিন লুকাইয়া রহিল না; মোগলের অধঃপনকাল নিকট বুঝিয়া বাহুবলে হিন্দুরাজত্ব সংস্থাপন করিবার আশায়, তাহারা দলে দলে অসি-হস্তে দেশবিদেশে ছুটিয়া বাহির হইল। দিল্লীর বাদশাহ তাহা দের হস্তে ক্রীড়াঙ্কন্দুক হইয়া উঠিলেন, তাহারা ভারতবর্ষের বিবিধ প্রদেশে রাজকরের চতুর্থাংশ “চৌথ আদায়ের “ফরমাণ” পাইয়া বাহুবলে ন্যায্যগণ্ডা বুঝিয়া লইবার জন্য বাঙ্গালাদেশেও পদার্পণ করিল;—বাঙ্গালার ইতিহাসে ইহারই নাম “বৰ্গীর হাঙ্গামা"।

 বৰ্গীর হাঙ্গামার কথা এখন ইতিহাসের জীর্ণস্তরে মিশিয়া গিয়াছে। লোকে আর তাহার কথা আলোচনা করিবার সময়ে বিষাদের দীর্থ- নিঃশ্বাস পরিত্যাগ করে না। কিন্তু সে কালে বর্গীর হাঙ্গামাই বাঙ্গালীর সর্বনাশের সূত্রপাত করিয়াছিল। চতুর মহারাষ্ট্রীয়গণ জানিত যে, বাঙ্গালীর অনুগত, প্রাণ; বাঙ্গালার সমতলক্ষেত্রে একবার পদার্পণ করিতে পারিলে, অন্নজীবি-বাঙ্গালী সম্মুখ যুদ্ধে অগ্রসর হইতে পারিবে না। দেশে দুর্গ নাই; রাজধানী হইতে গণ্ডগ্রাম পর্যন্ত সমুদয় দেশ অরক্ষিত; সুতরাং বাঙ্গালাদেশে পদার্পণ করিয়া তাহারা একেবারে কাটোয়া পর্যন্ত আসিয়া পড়িল![১] সেকালে কাটোয়ায় একটি ছোট

  1. কাটোয়া অনেক দিনের পুরাতন স্থান। এরিয়ানের ইতিহাসেও ‘কাটদ্বীপ” বলিয়া ইহার উল্লেখ আছে। মুকুন্দরাম কবিকঙ্কণের চণ্ডীতে এবং ধর্মপুরাণেও