পড়িলেও লোকে সহসা বসতিগ্রামের চতুঃসীমা পরিত্যাগ করিতে চাহিত না। ষে বাস্তু ভিটার উপর দাঁড়াইয়া পূজনীয় পিতৃপিতামহেরা শৈশব, যৌবন, বার্দ্ধক্য অতিবাহিত করিয়া পুণ্যলোকে প্রস্থান করিয়া-ছেন, বাঙ্গালীর চক্ষে তাহার প্রতিধুলিমুষ্টিও পবিত্র বলিয়া পরিচিত ছিল। সেই জন্য মুসলমান বাদশাহেরা দ্বিগুণ, ত্রিগুণ,অথবা চতুগুণ মাত্রায় ভূমির কর বৃদ্ধি করিলেও লোকে পৈতৃক ভিটার মমতা ত্যাগ করিতে না পারিয়া তাহাতে সম্মত হইত।
হিন্দু রাজত্বে যে পরিমাণে ভূমির কর নির্দিষ্ট ছিল সম্রাট আক, বরের সময়ে তাহা দ্বিগুণ হইয়া উঠিয়াছিল![১] মুর্শিদ কুলী খাঁ সেই রাজকর ক্রমশঃ বৃদ্ধি করিয়া, তাহার উপর আবার কতকগুলি “বাজে জমা” বার করিয়াছিলেন। সুজা খাঁর নবাবী আমলে সে জমার সংখ্যা এবং পরিমাণ ক্রমেই বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। তিনি “নজরাণা মোকরির,” “জার মাথট,” “মাথট ফিলখানা,” এবং “আব- ওয়াব ফৌজদারী” নামে অনেকগুলি নূতন বাজে জমা সংস্থাপন করিয়া রাজস্ব বৃদ্ধি করিয়াছিলেন। আলিবর্দ্দীর শাসনসূচনাতে হীরাঝিলের ব্যয় নির্ব্বাহের জন্য সিরাজদ্দৌলা কৌশল ক্রমে যে নজরানা আদায় করিয়া লইয়াছিলেন, তাহা ক্রমে “নজরাণা মরগঞ্জ” নামে বার্ষিক জমায় পরিণত হইয়া উঠিল।[২]
এই সকল বাজে জমা আদায় করিয়াও লোকে কথঞ্চিৎ সুথসম্পদে জীবন যাপন করিতেছিল। কিন্তু নবাব আলিবর্দী সিংহাসনে আরোহণ করিতে না করিতেই এক নূতন উপদ্রবের সূত্রপাত হইল। বহুদিন