পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
সিরাজদ্দৌলা।

যেমন স্নেহ করিতেন, সেইরূপ বিশ্বাস করিতেন; কেবল সেই জন্যই মীর জাফরকে এই উচ্চ রাজপদে নিযুক্ত করিয়াছিলেন।

 মীরজাফর মহারাষ্ট্র-দমনের ভার পাইয়া মহাসমারোহে মেদিনী- পুর পর্যন্ত গমন করিলেন; কিন্তু মেদিনীপুর পর্যন্ত আসিয়াই বিলাস- তরঙ্গে ডুবিয়া পড়িলেন! তাঁহার চরিত্রে বীরোচিত সদগুণরাশি যতদূর বিকশিত হইবার সুযোগ পাইয়াছিল, তাহা অপেক্ষা যৌবনোচিত। বিলাসবাসনাই সমধিক স্ফূর্ত্তিলাভ করিয়াছিল! তিনি কোন দিনই সাহসী বীরপুরুষ বলিয়া পরিচিত হইতে আগ্রহ প্রকাশ করেন নাই; ইংরাজের ইতিহাসেও মীরজাফর “ক্লাইবের গর্দ্দভ” বলিয়া পরিচিত! বল নবাবের অন্তরঙ্গ বলিয়া সেনাপতি-পদে আরোহণ করিয়াছিলেন। আলিবর্দ্দী কুটুম্বের সমভীতির সংবাদ পাইয়া আতাউল্লা নামক আর একজন বিশ্বস্ত রণকুশল সেনাপতিকে পাঠাইয়া দিলেন।

 মীরজাফরকে সাহায্য করা দূরে থাকুক, আতাউল্লা তাঁহার সাহায্যে লঙ্কাভাগ করিবার কল্পনা করিলেন। আতাউল্লা সিংহাসনে বসিবেন, মীরজাফর পাটনার নবাব হইবেন, এবং সেই উদ্দেশ্য সাধন করিবার জন্য উভয়ের সমবেত শক্তিতে আলিবর্দ্দীকে সিংহাসনচ্যুত করিয়া কণ্টক দূর করিবেন! মীরজাফর বড় মৃদুস্বভাব, বিলাসপ্রিয়, স্বার্থপরায়ণ বলিয়া সকলের নিকটেই পরিচিত ছিলেন; সেই জন্য আতাউল্লা সহজেই তাঁহাকে স্বপক্ষে টানিয়া লইতে সুবিধা পাইলেন।

 আলিবর্দ্দীর কপালে বিশ্রাম সুখ ছিল না। তিনি কুটুম্বের কুপ্রবৃত্তির পরিচয় পাইয়া নিজেই যুদ্ধযাত্রা করিলেন। আলিবর্দ্দী যখন সসৈন্যে বিদ্রোহীদ্বয়ের সম্মুখীন হইলেন, তখন উভয় সেনাপতিই আত্মসমর্পণ করিলেন।আলিবর্দ্দী বৰ্গীর হাঙ্গামা দমন করিয়া সেনাপতিদ্বয়কে