পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
সিরাজদ্দৌলা

বুঝাইতে পারিল না; বরং সকলে মিলিয়া বুঝাইয়া দিল যে, জানকীরাম ভয় পাইয়া সন্ধির প্রস্তাব করিবার জন্যই এরূপ ব্যবহার করিতেছেন। সুতরাং সিরাজদ্দৌলা সসৈন্যে দুর্গবেষ্টন করিয়া বসিয়া রহিলেন।

 নবাব আসিলেন। তাঁহার আগমনবার্ত্তা জানিতে পারিয়া সিরাজ তাঁহার নিকট উপনীত হইলেন।[১] সিরাজদ্দৌলাকে একাকী নিরস্ত্রদেহে সহসা শিবিরের মধ্যে প্রবেশ করিতে দেখিয়া নবাব তাঁহাকে একেবারে স্নেহের কোলে তুলিয়া লইলেন; দুই গণ্ড বহিয়া স্নেহের অশ্রুধারা ঢালিয়া পড়িল; সিরাজকে যে অক্ষতদেহে জীবিত পাইয়াছেন, ইহাতেই বৃদ্ধ মাতামহ আনন্দে উন্মত্তের মত নৃত্য করিতে লাগিলেন। মাতামহে দৌহিত্রে আর শক্তিপরীক্ষা হইতে পারিল না, অশ্রুধারায় অশ্রুধারা টানিয়া আনিল, উভয়ের অশ্রুধারায় সে ছার বিদ্রোহ কোথায় ভাসিয়া গেল!

 নবাব আসিয়াছেন শুনিয়া দুর্গদ্বার উন্মুক্ত হইল, মহাকলরবে সিরাজসৈন্য দুর্গমধ্যে প্রকাশ করিল। আলিবর্দ্দী পাটনার দুর্গমধ্যে দরবারে উপবেশন করিলেন, সিংহাসনের একপার্শ্বে স্নেহভাজন দৌহিত্রকে

  1. সিরাজদ্দৌলা এই উপলক্ষে অনেকের নিকট নিন্দাভাজন হইয়াছেন। কিন্তু তিনি যে আলিবর্দ্দীর সঙ্গে কলহ করেন নাই, মুতক্ষরীণই তাহার প্রমাণ। আলিবর্দ্দীর আগমন-সংবাদ প্রাপ্ত হইবামাত্রই সিরাজ তাঁহার নিকট গিয়া রীতিমত “কদম বোসী”—পদচুম্বন করিয়া অভ্যর্থনা করিয়াছিলেন। রাজা জানকীরামের দোষেই যে এত অনর্থ ঘটিয়াছে, তাহা স্বীকার করিয়া স্বয়ং নবাব আলিবর্দ্দী জানকীরামকে ক্ষমা করার জন্য সিরাজকে অনু্রোধ করিয়াছিলেন।