পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪
সিরাজদ্দৌলা

বাণিজ্য করিবার অধিকার ছিল না। সুতরাং তাহাদের প্রতিযোগিতায় দেশের লোকের বিশেষ ক্ষতি হইত না। কিন্তু ইংরাজগণ বিনাশুল্কে জলে স্থলে বাণিজ্য করিবার আদেশে বাদশাহের ফরমাণ পাইয়া নিঃসম্বল দেশীয় বণিকদের লাভের পথে কাঁটা দিয়াছে বলিয়া, ইংরাজদিগের উপরেই তাঁহার বিদ্বেষ বদ্ধমূল হইয়াছিল। বাদশাহের ফরমাণ পাইয়া কেবল যে ইষ্টইণ্ডিয়া কোম্পানীই বিনাশুল্কে বাণিজ্য করিত—তাহা নহে। লাভের গন্ধ পাইয়া কোম্পানীর কর্ম্মচারীর আত্মীয় স্বজনেরাও এদেশে আসিয়া গোপনে গোপনে স্বাধীন বাণিজ্য করিতেন; এবং কোম্পানীর কর্ম্মচারীদিগের নিকট হইতে বিনাশুল্কে বাণিজ্য করিবার পরোয়ান লইয়া তাঁহারাও দেশের লোকের অন্নগ্রাস কাড়িয়া খাইতেন। জন্ উড্ নামক এইরূপ একজন ইংরাজ বণিক কোম্পানীর নিকট বিনাশুল্কে বাণিজ্য করিবার পরোয়ানা চাহিয়া নিজ আবেদনপত্রে স্পষ্টই লিখিয়াছিলেন যে, স্বাধীন ইংরাজ বণিককেও কোম্পানীর ন্যায় বিনাশুল্কে বাণিজ্য করিবার জন্য পরোয়ানা না দিলে সর্ব্বনাশ হইবে![১] বাদশাহের ফরমাণ অমান্য করিবার উপায় নাই, যতদিন ইংরাজ থাকিবে, ততদিন তাহারা বিনা শুল্কে বাণিজ্য করিবে; সুতরাং ইংরাজদিগকে তাড়াইয়া দিতে না পারিলে দেশীয় বাণিজ্যের কখনই বৃদ্ধি হইবে না;—বোধ হয়, সেই জন্যই বালক সিরাজদ্দৌলা ইংরাজদিগকে তাড়াইয়া দিবার সুযোগ অনুসন্ধান করিতেন। সেনাপতি মুস্তফা খাঁ থাকিতে তিনি সিরাজের প্রস্তাব সমর্থন করিতেন; কিন্তু আলিবর্দ্দীর ভয়ে তিনিও ইংরাজ

  1. It will reduce a free merchant to the condition of a farmer or indeed of a meanest black fellow."—Long's Selections.