পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সিরাজের ইংরাজ বিদ্বেষ।
৫৫

তাড়াইবার আয়োজন করিতে পারিতেন না। প্রস্তাব উঠিলেই আলিবর্দ্দী বলিতেন,—“মুস্তফা যুদ্ধব্যবসায়ী; যুদ্ধ বাধিলেই তাহার লাভ, তোমরা তাহার কথায় কর্ণপাত করিও না।”[১]

 সিরাজের বিশ্বাস ছিল যে, সমস্ত “ফিরিঙ্গীস্থানে” দশ সহস্রের অধিক অধিবাসী নাই,[২] এবং দেশে দেশে পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করাই তাহাদের একমাত্র জীবনোপায়। তাহাদের দেশে যে শিল্প আছে, বাণিজ্য আছে; রাজা আছে, রাজতন্ত্র আছে; সৈন্য আছে, সেনাপতি আছে; আবশ্যক হইলে সহস্র সহস্র বীরপুরুষ জীবন বিসর্জ্জন করিয়াও ইংলণ্ডের গৌরব-পতাকা রক্ষা করিবার জন্য অগ্রসর হইতে যে কিছুমাত্র ইতস্ততঃ করিবে না, সিরাজদ্দৌলা বোধ হয় ততটা স্বীকার করিতেন না। আলিবর্দ্দী ইংরাজদিগের সহিত কলহ করিতে নিষেধ করিলে, সিরাজদ্দৌলা তাহার প্রকৃত কারণ বুঝিতে না পারিয়া বৃদ্ধ মাতামহকে ভীরু কাপুরুষ বলিয়া তিরস্কার করিতে ভীত হইতেন না। পরবর্ত্তী যুগে নেপোলিয়ান যাহাদিগকে “দোকানদারের জাতি’’ বলিয়া উপহাস করিয়া গিয়াছেন, তাহারা পূর্ব্ববর্ত্তী যুগে সিরাজদ্দৌলার চক্ষেও ততোধিক সম্মানের যোগ্য বলিয়া বিবেচিত হন নাই।

 আলিবর্দ্দী মহারাষ্ট্র-দমনে বিব্রত হইয়া ইংরাজদিগের অত্যাচারের কথা জানিয়া শুনিয়াও প্রতীকার করিবার চেষ্টা করিতেন না। বরং

  1. Stewart's History of Bengal.
  2. Orme, Vol. ll—সিরাজদ্দৌলার সময়ে এ দেশের লোকে ইউরোপকে “ফিরিঙ্গীস্থান” বলিত; কিন্তু “ফিরিঙ্গীস্থানের জনসংখ্যা সম্বন্ধে তাহারা যে এতদুর অজ্ঞ ছিল, সেরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। সিরাজদ্দৌলার অজ্ঞতা অপবাদের একমাত্র প্রমাণ ইংরাজ-লিখিত ইতিহাস।