পাতা:বংশ-পরিচয় (নবম খণ্ড) - জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুমার.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SVo বংশ-পরিচয় তবে মধ্যে মধ্যে কন্যা তারাসুন্দরীকে দেখিবার মানসে তিনি নাটোরে যাইতেন। রাজা রামকান্তের মৃত্যুর এক বৎসর পরে রাণী ভবানী খাজুর গ্রামের রঘুনন্দন লাহিড়ীর সহিত তারাসুন্দরীর শুভ বিবাহ দেন ; কিন্তু বিবাহের এক বৎসর পরেই কুসুম-কোমল বালিকা তারাসুন্দরী বিধবা হন। তদবধি কঠোর ব্ৰহ্মচৰ্য্য পালন করিয়া মাতা ও কন্যা গঙ্গাতীরে বাস করিতেন । রাজ্য-শাসনের কোন উপায়ান্তর না দেখিয়া এবং পতির অন্তিম আদেশ স্মরণ করিয়া রাণী ভবানী রাজসাহী জেলার আমরুল পরগণার আট গ্রামের রায় বংশের রামকৃষ্ণ রায়কে পোষ্য পুত্ৰ গ্ৰহণ করিলেন । কথিত আছে, পোষ্য-গ্ৰহণ-সভায় অনেক পালক উপস্থিত হইয়াছিল, সকলেই সভামধ্যে আসিয়া অধোবদনে আপনাপন আসনে উপবেশন করে। যখন বালক রামকৃষ্ণের বসিবার সময় আসিল, তখন রামকৃষ্ণ আসিয়া না বসিয়া দাড়াইয়া রহিলেন । তদর্শনে দয়াৱাম বলিলেন, “বালক তুমি দাড়াইয়া কেন ?” বালক উত্তর করিল, “আমার জুতা খুলিয়া দেয় কে ?” দয়ারাম তখন স্বহস্তে জুতা খুলিয়া দিলেন এবং এই বালকের তেজস্বিতা ও আত্মসম্মানজ্ঞান-দর্শনে মোহিত হইয়া রাণী ভবানী ও দয়ারাম উভয়েই ইহাকে নাটোর রাজ্যের ভাবী উত্তরাধিকারি-পদে বরণ করিলেন । বস্তুতঃ নাটোর রাজবংশের সহিত রামকৃষ্ণের বংশেরও সৌসাদৃশ্য ছিল। যে জীব ওঝা (মৈত্র) হইতে উৎপন্ন কামদেবের বংশ নাটোর-রাজ্যের আদিপুরুষ, সেই কামদেবের কনিষ্ঠ ভ্ৰাতা অভিরামের বংশ হইতেই রামকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। রামকৃষ্ণের পিতার নাম ছিল--হরিদেব রায়। পোষ্যপুত্ৰ গ্রহণের পর হইতে রাণী ভবানী নাটোর একরূপ পরিত্যাগ করেন, অধিকাংশ সময় তিনি হয় মুর্শিদাবাদ বড়নগরে, না হয় কাশীধামে অবস্থিতি করিতেন ।