পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৬
সিরাজদ্দৌলা।

প্রদান করা হইয়াছিল। সেই সুযোগে তাঁহারা যদি সিপাহীদিগের উপর লাফাইয়া পড়িবার আয়োজন না করিতেন, ইতস্ততঃ বিচরণ করিয়া পলায়নপথের সন্ধান লইবার জন্য আগ্রহ প্রকাশ না করিতেন, তবে হয়ত তাঁহাদিগকে কক্ষমধ্যে আদৌ অবরুদ্ধ হইতে হইত না। যখন অবরোধের আয়োজন হইল, তখন ইংরাজেরাই কারাকক্ষ দেখাইয়া দিয়াছিলেন; নবাবসেনা তাহার আয়তনবিষয়ে কিছুমাত্র সন্ধান রাখিত না।[১] হলওয়েল সর্ব্বাগ্রে গৃহপ্রবেশ করিয়া কোনরূপ আপত্তি না করায়, তাহারা সকলকেই তন্মধ্যে প্রবিষ্ট করাইয়া দিয়াছিল। ইহাতে যদি কষ্ট হইয়াছিল, তবে সে কষ্টের কথা বুঝাইয়া না বলিয়া বা কোন সেনাপতিকে সংবাদ না পাঠাইয়া, উদ্ধত ইংরাজসেনা বাহুবলে দ্বার ভাঙ্গিয়া ফেলিবার আয়োজন করিয়া প্রহরীদিগকে যে অতিমাত্র ভীত করিয়া তুলিয়াছিল, তাহাতে সন্দেহ হইতে পারে না। হলওয়েলের কাহিনী যদি সত্য হয়, তবে ইহাও বোধ হয় সত্য যে, ইংরাজসেনার আস্ফালন দেখিয়াই প্রহরিগণ নবাবের বিনানুমতিতে দ্বার মোচন করিতে সম্মত হয় নাই। ইহার জন্য তাহাদিগের অপরাধ হইতে পারে না। আর তাহারা বাহিরে দাঁড়াইয়া জানালার ধারে যাহাদিগকে দেখিতে পাইতেছিল, তাহারা ত বিশেষ যন্ত্রণাভোগের পরিচয় প্রদান করে নাই। অন্ধকার কারাকক্ষের অপরাংশে লোকচক্ষুর অগোচরে যাহারা মর্ম্মযাতনায় ছটফট করিতেছিল, বাহির হইতে প্রহরিসেনা তাহার বিষয় বোধ হয় কিছুই জানিতে পারে নাই।[২] এ সকল কথার

  1. Mill, vol. iii.
  2. মেকলে লিখিয়া গিয়াছেন;—“The gaolers in the meantime held tights to the bars, and shouted with laughter at the frantic struggles of their victims.” বলা বাহুল যে, স্বয়ং হলওয়েলও এ কথা লিখেন নাই!