পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৮
সিরাজদ্দৌলা

করিতে অগ্রসর হইয়াছেন? কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তাঁহাদিগের মনে হইল, এ সকল বুঝি ইন্দ্রজাল! এ সকল বুঝি কেবলমাত্র ইংরাজদিগকে ভয় দেখাইবার বাহ্যাড়ম্বর! তখন তাঁহারা সাহসে বুক বাঁধিয়া ধীরে ধীরে সিংহাসনের দিকে অগ্রসর হইয়া সসস্ত্রমে ‘কুর্ণিশ’ করিয়া দণ্ডায়মান হইলেন।

 সিরাজদ্দৌলা তাঁহাদিগকে যথাযোগ্য সাদরসম্ভাষণে কুশল জিজ্ঞাসা করিয়া বুঝাইয়া দিলেন যে, সন্ধিসংস্থাপন করিবার জন্যই তিনি সশরীরে এতদূর অগ্রসর হইয়াছেন। ইংরাজেরা বলিলেন যে, তাঁহারাও সন্ধির জন্য লালায়িত হইয়াছেন; যুদ্ধকলহে তাঁহাদিগের বাণিজ্যবিস্তারে বিঘ্ন ঘটিতেছে। সিরাজদ্দৌলা তখন ইংরাজদিগকে সন্ধিপত্র নির্দ্ধারণ করিবার জন্য দেওয়ানের পটমণ্ডপে পাঠাইয়া দিয়া স্বয়ং বিশ্রামভবনে গমন করিলেন।

 ইংরাজদিগের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হইল। তাঁহারা সহাস্যবদনে অভিবাদন করিয়া বিদায়গ্রহণ করিলেন। কিন্তু কুচক্রী-মন্ত্রিদলের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হইল না। তাঁহারা সুকৌশলে সন্ধির প্রস্তাব চূর্ণ করিবার আয়োজন করিতে লাগিলেন।

 যে দুইজন ইংরাজ রাজপুরুষ প্রতিনিধি সাজিয়া, হাতিয়ার বাঁধিয়া, নবাব-দরবারে উপনীত হইয়াছিলেন, তাঁহারা কুঠিয়াল সিবিলিয়ান;—সিরাজদ্দৌলার নামে তাঁহাদের অন্তরাত্মা সহজেই কাঁপিয়া উঠিত। মন্ত্রিদল অনন্যোপায় হইয়া, এই ইংরাজযুগলের মনে সহসা ভয়ের সঞ্চার করিয়া কার্য্যোদ্ধারের আয়োজন করিলেন!

 ইংরাজেরা দরবার হইতে বাহির হইবামাত্র সুচতুর উমাচরণ আসিয়া ধীরে ধীরে তাঁহাদের কাণে কাণে নিতান্ত পরমাত্মীয়ের ন্যায় বলিতে লাগিলেন,—“দেখিতেছ কি? প্রাণ বাঁচাইতে চাহ ত এখনই পলায়ন কর। সন্ধির প্রস্তাবে নিশ্চিন্ত হইয়াছ? এ সন্ধি নহে;—ইহা কেবল কালহরণের