এতদ্দেশীয় স্ত্রীলোকদিগের পূর্ব্বাবস্থা/কুন্তী

উইকিসংকলন থেকে
কুন্তী।

 কুন্তীর মনের ভাব কিরূপ ছিল, তাহা তাঁহার উপদেশেতে প্রতীয়মান। দ্রৌপদী যখন বনে গমন করেন, তখন তিনি র্তাঁহাকে বলেন—“দুঃখ উপস্থিত হইয়াছে বলিয়া শোক করিও না। তুমি স্ত্রীধর্ম্মাভিজ্ঞ, সুশীলা, সাধ্বী ও সদাচারবতী তোমার গুণে উভয় কুল অলঙ্কৃত হইয়াছে; অতএব স্বামীর প্রতি কিরূপ ব্যবহার করিতে হয়, তোমাকে উপদেশ দিবার আবশ্যক নাই। হে অনঘে! কৌরবেরা পরম ভাগ্যবান, যে হেতু তোমার কোপানলে তাহারা দগ্ধ হয় নাই। বৎসে! আমি সর্ব্বদাই তোমার শুভানুধ্যান করিতেছি, তুমি সচ্ছন্দে গমন কর।”

 উদ্যোগ পর্ব্বে কুন্তী শ্রীকৃষ্ণকে বলিয়াছিলেন, “লোকে সৎস্বভাব দ্বারা যেরূপ মান্য হইতে পারে, ধন বা বিদ্যার দ্বারা তদ্রূপ হইতে পারে না।”

 বীরের কন্যাই বীর-ভাব প্রকাশ করেন। কুন্তী বলিলেন—“হে কেশব! তুমি বৃকোদর ও ধনঞ্জয়কে কহিবে যে, ক্ষত্রিয় কন্যা যে নিমিত্ত গর্ভ ধারণ করে, তাহার সময় সমুপস্থিত হইয়াছে; অতএব যদি তোমরা এই সময়ে বিপরীতাচরণ কর, তাহা হইলে অতি ঘৃণাকর কর্ম্মের অনুষ্ঠান করা হইবে। তাহারা নৃশংসের ন্যায় কার্য্য করিলে আমি তাহাদিগকে চিরকালের নিমিত্ত পরিত্যাগ করিব; সময় ক্রমে প্রাণ পর্য্যন্ত পরিত্যাগ করিতে হয়”। তাঁহার আধ্যাত্মিক ভাব এই উপদেশে প্রকাশ হইতেছে—“আমি পুত্রগণের নির্ব্বাসন, প্রব্রজ্যা, অজ্ঞাতবাস ও রাজ্যাপহরণ প্রভৃতি নানাবিধ দুঃখে অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছি। দুর্য্যোধন আমাকে ও আমার পুত্রগণকে এই চতুর্দ্দশ বৎসর অপমান করিতেছে; ইহা অপেক্ষা দুঃখের বিষয় আর কি আছে? কিন্তু ইহা কথিত আছে যে, দুঃখ ভোগ করিলে পাপক্ষয় হয়, পরে পুণ্য ফল সুখ সম্ভোগ হইয়া থাকে; অতএব আমরা এক্ষণে দুঃখ ভোগ করিয়া পাপক্ষয় করিতেছি; পশ্চাৎ সুখ সম্ভোগ করিব; তাহার সন্দেহ নাই।”