এতদ্দেশীয় স্ত্রীলোকদিগের পূর্ব্বাবস্থা/দ্রৌপদী

উইকিসংকলন থেকে
দ্রৌপদী।

 দ্রৌপদী শৈশবাবস্থায় পিতার ক্রোড় হইতে আচার্য্যের নিকট উপদেশ গ্রহণ করিতেন। তাঁহার শিক্ষা বিষয়ে মহাভারতে এইরূপ বর্ণন—“অনন্তর দ্রুপদ রাজা আলেখ্য রচনা ও শিল্পকার্য্য প্রভৃতি সকল বিষয়ে কন্যাকে যত্ন পূর্ব্বক শিক্ষা প্রদান করিতে লাগিলেন। কন্যা দ্রোণ সন্নিধানে অস্ত্র শাস্ত্র শিক্ষা করিলেন। পরে দ্রুপদ মহিষী পুত্রের ন্যায় কন্যার পরিণয় কার্য্য সমাধান করিবার নিমিত্তে দ্রুপদ রাজাকে অনুরোধ করিলেন”। পাণ্ডবদিগকে বিবাহ করিয়া তিনি ইন্দ্রপ্রস্থে থাকিয়া অনেক কার্য্যে ব্যস্ত থাকিতেন—অভ্যাগত অতিথি এবং দাস দাসীদিগের ভোজন ও পরিচ্ছদ বিষয়ে তত্ত্ব করিতেন। গোশালা ও মেষশালা আপনি দেখিতেন। কোষ তাঁহার অধীনে ছিল, ও আয় ব্যয় সম্বন্ধীয় সকল কার্য্য তিনি নির্ব্বাহ করিতেন। যে সকল কার্য্যের ভার গ্রহণ করিয়াছিলেন তাহ অতি বিনীত ও শান্তভাবে করিতেন। তিনি কহিতেন যে, জীব নিষ্কাম না হইলে মুক্তি পায় না। যখন তিনি বনে ছিলেন তখন তাঁহার সত্যভামার সহিত পতি বশকরণ বিষয়ক কথোপকথন হয়। তিনি কহেন, “আমি কাম ক্রোধ ও অহঙ্কার পরিহার পূর্ব্বক সতত পাণ্ডবগণ ও তাঁহাদের অন্যান্য স্ত্রীদিগের পরিচর্য্যা করিয়া থাকি। অভিমান পরিহার পূর্ব্বক প্রণয় প্রকাশ করিয়া অনন্যমনে পতিগণের চিত্তানুবর্ত্তন করি। আমি প্রত্যহ উত্তম রূপে গৃহ পরিষ্কার, গৃহোপকরণ মার্জ্জন, পাক, যথা সময়ে ভোজন প্রদান ও সাবধানে ধান্য রক্ষা করিয়া থাকি। দুষ্ট স্ত্রীর সহিত কখন সহবাস করি না; তিরস্কার বাক্য মুখেও আনি না, সকলের প্রতি অনুকূল ও আলস্য শূন্য হইয়া কাল যাপন করি। পরিহাস সময় ব্যতীত হাস্য এবং দ্বারে বা অপরিষ্কৃত স্থানে কিম্বা গৃহোপবনে সতত বাস করিয়া অতিহাস ও অতিরোষ পরিত্যাগ পূর্ব্বক সত্যে নিরত হইয়া নিরন্তর ভর্ত্তৃগণের সেবা করিয়া এক মুহূর্ত্ত সুখী থাকি না। স্বামী কোন আত্মীয়ের নিমিত্তে প্রোষিত হইলে পুষ্প ও অনুলেপন পরিত্যাগ পূর্ব্বক ব্রতানুষ্ঠান করি। উপদেশানুসারে অলঙ্কৃত ও প্রযত হইয়া স্বামীর হিতানুষ্ঠান সাধন করিয়া থাকি।”