পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যে, সমাজের বর্ত্তমান অবস্থা যদি চলে, তবে বাঙ্গলার বহু নিঃস্বার্থ কর্ম্মী ক্রমে ক্রমে অনিলবরণের পন্থা অবলম্বন করিতে বাধ্য হইবে।

 আজ বাঙ্গলার অনেক কর্ম্মীর মধ্যে ব্যবসাদারী ও পাটোয়ারী বুদ্ধি বেশ জমিয়া উঠিয়াছে। তাহারা এখন বলিতে আরম্ভ করিয়াছে, “আমাকে ক্ষমতা দাও—নতুবা আমি কাজ করিব না।” আমি জিজ্ঞাসা করি—নরনারায়ণের সেবা ব্যবসাদারীতে, Contract-এ কবে পরিণত হইল? আমি তো জানিতাম সেবার আদর্শ এই—

“দাও দাও ফিরে নাহি চাও
থাকে যদি হৃদয়ে সম্বল।”

যে বাঙ্গালী এত শীঘ্র দেশবন্ধুর ত্যাগের কথা ভুলয়াছে—সে যে কতদিনের আগেকার স্বামী বিবেকানন্দের ‘বীরবাণী’ ভুলিবে—আর বিচিত্র কি?

 দুঃখের কথ, কলঙ্কের কথা ভাবিতে গেলে বুক ফাটিয়া যায়। প্রতিকারের উপায় নাই—করিবার ক্ষমতা নাই— তাই অনেক সময় ভাবি—চিঠিপত্র লেখা বন্ধ করিয়া বাহ্য জগতের সহিত সকল সম্বন্ধ শেষ করিয়া দিই। পারি তো দেশবাসীর পক্ষ হইতে আমরা লোকচক্ষুর অন্তরালে তিলে তিলে জীবন দিয়া প্রায়শ্চিত্ত করিয়া যাইব। তারপর মাথার উপরে যদি ভগবান থাকেন, পৃথিবীতে যদি সত্যের প্রতিষ্ঠা হয়, তবে আমাদের হৃদয়ের কথা দেশবাসী একদিন না একদিন বুঝিবেই বুঝিবে। দেশের নামে এতবড় একটা প্রহসনে অভিনয় দেখিব—বিংশ শতাব্দীর বাঙ্গলা দেশে যে ‘Nero is fiddling while Rome is burning’ কথার একটা নূতন দৃষ্টান্ত চোখের সামনে ভাসিয়া উঠিবে—কোনও দিন ভাবি নাই।

 অনেক কথা বলিয়া ফেলিলাম—হৃদয়ের আবেগ চাপিয়া রাখিতে পারিলাম না। আপনাদের নিতান্ত আপনার বলিয়া মনে করি তাই এত কথা বলিতে সাহস করিলাম। আপনারা গঠনমূলক কাজে

২৫৩