পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এক বিষম সমস্যা বলিয়া বোধ হয়। যিনি আনন্দের নিধি তাঁহাকে বাদ দিলে যে আর কিছুতেই আনন্দ থাকে না। যিনি আনন্দের আকরস্বরূপ তাঁহাকে ধরা চাই—তবে ত আনন্দ পাইব।

 যদি চৈতন্য না হয়— যদি ভগবদ্দর্শন না হয়—তবে সমস্ত জীবনটাই বৃথা গেল। পূজা, জপ, ধ্যান, উপাসনা প্রভৃতি আমরা যাহা করি—তাহার একমাত্র উদ্দেশ্য—ভগবদ্দর্শন বা ঈশ্বরলাভ। এই উদ্দেশ্য সিদ্ধ না হইলে সব বৃথা। যে একবার সেই অমৃতের খনি পাইয়াছে—সে আর সংসার-গরল পান করিতে যায় না।

 তিনি আমাদের সংসার খেলনার দ্বারা ভুলাইয়া রাখিয়াছেন এবং আমাদিগকে মায়াবদ্ধ জীব করিয়া ফেলিয়াছেন। মা সংসারের কাজে ব্যস্ত—ছেলে খেলনা লইয়া খেলিতেছে, যতক্ষণ পর্য্যন্ত ছেলে খেলনা দূরে ফেলিয়া “মা মা” বলিয়া ব্যাকুলভাবে না ডাকে ততক্ষণ মা ছেলের কাছে আসে না। না মনে করে— ছেলে ত খেলিতেছে আমি আর কেন যাইব। কিন্তু যখন ছেলের ক্রন্দনধ্বনি মা’র কানে বাজে তখন মা আর থাকিতে না পারিয়া দৌড়িয়া আসে। আমাদের বিশ্বজননী আমাদের লইয়া ঠিক সেইরূপ খেলিতেছেন। ভগবানে ষোল আনা মন না দিলে তাঁহাকে পাওয়া যায় না—যদি ভগবানের চরণে দুই চার আনা মন দিলে তাঁহাকে পাওয়া যাইত তবে বিষয়মধু-পানমত্ত লোকেরা ভগবানকে পায় না কেন? তাঁহাকে না পাইলে সব বৃথা—সব বৃথা—মানুষ জীবন এক বিড়ম্বনা—এক অসহ্য ভার।

 আপনি কি বলেন?

 তাঁকে না পেলে কি লইয়া দিন কাটাইব—কি লইয়া চিন্তা করিব—কাহার সহিত আলাপ করিব এবং কোথা হইতে আনন্দ পাইব। যিনি সব বস্তুরই আকরস্বরূপ তাঁহাকে ধরা চাই—তাঁহার দর্শন লাভ করা চাই।

 তাঁহাকে পাইতে হইলে সাধনা চাই—ব্যাকুলভাবে ডাকা

২৫