পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭১

(শ্রীদিলীপকুমার রায়কে লিখিত)

মান্দালয় জেল
-।৫।২৫

প্রিয় দিলীপ,

 তোমার ২৪।৩।২৫ তারিখের চিঠি পেয়ে আনন্দিত হয়েছি। তুমি আশঙ্কা করেছিলে যে, মাঝে মাঝে যেমন ঘটে এবারও বুঝি তেমনি চিঠিখানাকে “double distillation”-এর ভিতর দিয়ে আসতে হবে কিন্তু এবার তা হয়নি সেজন্য খুবই খুশী হয়েছি।

 তোমার চিঠি হৃদয়তন্ত্রীকে এমনই কোমলভাবে স্পর্শ করে চিন্তা ও অনুভূতিকে অনুপ্রাণিত করেছে যে, আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন, এ চিঠিখানিকে যে আবার “censor”-এর হাত অতিক্রম ক’রে যেতে হবে সেও আর এক অসুবিধা; কেন না, এটা কেউ চায় না যে তার অন্তরের গভীরতম প্রবাহগুলি দিনের উন্মুক্ত আলোতে প্রকাশ হয়ে পড়ুক। তাই এই পাথরের প্রাচীর ও লৌহদ্বারের অন্তরালে বসে আজ যা ভাব্‌ছি ও যা অনুভব কর্‌ছি, তার অনেকখানিই কোন এক ভবিষ্যৎ কাল পর্য্যন্ত অকথিতই রাখতে হবে।

 আমাদের মধ্যে এতগুলি যে অকারণে বা সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারণে জেলে আছি, সেই চিন্তা তোমার প্রবৃত্তি ও মার্জ্জিত রুচিতে আঘাত করবে এটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। কিন্তু ঘটনাগুলি যখন মেনে চলতেই হচ্ছে তখন সমস্ত ব্যাপারটাকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়েও দেখা যেতে পারে। একথা আমি বলতে পারি না যে, জেলে থাকাটাই আমি পছন্দ করি—কেননা, সেটা নিছক ভণ্ডামী হয়ে পড়ে। আমি বরং আরও বলি যে, কোন ভদ্র বা সুশিক্ষিত ব্যক্তি কারাবাস পছন্দ করতেই পারে না। জেলখানার সমস্ত আবহাওয়াটা মানুষকে যেন বিকৃত ও অমানুষ করে তোলারই উপযোগী এবং আমার বিশ্বাস এ-কথাটা সকল

১২৯