পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সঙ্গে স্বীকার করিতে হইতেছে যে, প্রস্তাবে এমন কতকগুলি সর্ত্ত আছে যাহা আপত্তিকর; তজ্জন্য উহা আমার পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়।

 ২। প্রথম হইতেই আমি যে কথা বলিয়া আসিতেছি তাহা হইল গভর্ণমেণ্ট আমাকে বিনা বিচারে অন্যায়ভাবে আটক করিয়া রাখিয়াছেন, এবং ইহার মধ্যে কোনও যুক্তি নাই। ভারতবর্ষের লোক বরাবরই বেঙ্গল অর্ডিনান্স ১৯২৪ ও উহার পরিণতি বেঙ্গল ক্রিমিনাল ল অ্যামেণ্ডমেণ্ট এ্যাক্ট ১৯২৫-কে বেআইনী আইন বলিয়া মনে করিয়াছে, যাহা এ দেশের লোকের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতাকে খর্ব্ব করার জন্যই প্রবর্ত্তিত হইয়াছে। কোনও সভ্য রাষ্ট্রেই এ ধরনের আইন ২৪ ঘণ্টার বেশী টিঁকিতে পারে না। বঙ্গীয় আইন সভার সদস্যরূপে আমি নির্ব্বাচিত হওয়ার পর অবিচারের মাত্রা আরও বাড়িয়া চলিয়াছে, আমার কারাবাসই তাহার প্রমাণ। পৃথিবীর সর্ব্বত্র আইন সভার সদস্যগণ যে অধিকার ভোগ করিয়া থাকেন—যাহা প্রাচীন এবং তর্কাতীত—উহা হইতে আমাকে বঞ্চিত রাখা হইয়াছে। এভাবে লোককে বিনা বিচারে ও যুক্তিতে অনির্দ্দিষ্ট কাল আটক করিয়া রাখিয়া গভর্ণমেণ্ট ফৌজদারী আইনের মূল নীতিটাকেই অগ্রাহ্য করিয়াছেন। তাছাড়া বঙ্গীয় আইন সভা বেঙ্গল ক্রিমিনাল ল অ্যামেণ্ডমেণ্ট এ্যাক্ট-কে স্বীকার করিয়া লয় নাই; তৎসত্ত্বেও উহাকে সুপারিশের দ্বারা কার্য্যকরী করিয়া গভর্ণমেণ্ট প্রমাণ করিয়া দিয়াছেন ভারতবর্ষের আইন-সভাগুলি কত অন্তঃসারশূন্য। তাঁহারা আইন সভার অধিকারসমূহ (যথা—গ্রেপ্তার, আটক ও উৎপীড়ন হইতে অব্যাহতি) হরণ করায় উহা প্রশাসকমণ্ডলীর অধীন হইয়া পড়িয়াছে; ফলে শাসনযন্ত্রের এই দুইটি বিভাগের মধ্যে যে স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকা উচিত উহা না হইয়া বরং বিপরীত একটা সম্পর্কই গড়িয়া উঠিয়াছে। অতএব যে অন্যায় গভর্ণমেণ্ট করিয়াছেন এবং এখনও করিয়া চলিয়াছেন উহার প্রতিবাদেই আমার মুক্তি দাবী করিতেছি।

৩০৪