পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আমার কারাবাস ব্যাপারটিকে তুমি একটা ‘Martyrdom’ বলে অভিহিত করেছ। অবশ্য ও-কথাটা তোমার গভীর অনুভূতির ও প্রাণের মহত্ত্বেরই পরিচায়ক। কিন্তু আমার সামান্য কিছু ‘humour’ ও ‘proportion’-এর জ্ঞান আছে, (অন্তত আশা করি যে আছে) তাই নিজেকে ‘Martyr’ বলে মনে করবার মত স্পর্ধা আমার নেই। স্পর্ধা বা আত্মম্ভরিতা জিনিষটাকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে চাই, অবশ্য সে বিষয়ে কতখানি সফল হয়েছি, শুধু আমার বন্ধুরাই বলতে পারেন। তাই ‘Martyrdom’ জিনিষটা আমার কাছে বড়জোর একটা আদর্শই হ’তে পারে।

 আমার বিশ্বাস বেশীদিনের মেয়াদীর পক্ষে সব চেয়ে বড় বিপদ এই যে, আপনার অজ্ঞাতসারে তাকে অকালবার্দ্ধক্য এসে চেপে ধরে সুতরাং এ-দিকে তার বিশেষ সতর্ক থাকাই উচিত। তুমি ধারণাই করতে পারবে না, কেমন করে মানুষ দীর্ঘকাল কারাবাসের ফলে ধীরে ধীরে দেহে ও মনে অকালবৃদ্ধ হয়ে যেতে থাকে, অবশ্য অনেকগুলি কারণই এর জন্য দায়ী—যথা, খারাপ খাদ্য, ব্যায়াম বা স্ফূর্তির অভাব, সমাজ হইতে বিচ্ছিন্ন থাকা একটা অধীনতার শৃঙ্খলভার, বন্ধুজনের অভাব, এবং সঙ্গীতের অভাব যাহা সর্ব্বশেষে উল্লিখিত হ’লেও একটা মস্ত অভাব। কতকগুলি অভাব আছে যা মানুষ ভিতর থেকে পূর্ণ করে তুলতে পারে, কিন্তু আবার কতকগুলি আছে যেগুলি বাইরের বিষয় দিয়ে পূর্ণ করতে হয়। এই সব বাইরের বিষয় থেকে বঞ্চিত হওয়াটা অকাল-বার্দ্ধক্যের জন্য কম দায়ী নয়। আলিপুর জেলে ইউরোপীয় বন্দীদের জন্য সঙ্গীতের সাপ্তাহিক বন্দোবস্ত আছে, কিন্তু আমাদের নেই। পিক্‌নিক্, বিশ্রম্ভালাপ, সঙ্গীত-চর্চ্চা, সাধারণ বক্তৃতা, খোলা জায়গায় খেলাধূলা করা, মনোমত কাব্য-সাহিত্যের চর্চ্চা—এ সমস্ত বিষয় আমাদের জীবনকে এতখানি সরস ও সমৃদ্ধ করে তোলে যে আমরা সচরাচর তা বুঝতে পারি না এবং যখন আমাদিগকে জোর

১৩২