পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উপস্থিত ছিলেন যাহার ফলে সহজ ও খোলাখুলিভাবে তিনি কোনও আলাপ আলোচনা চালাইতে পারেন নাই।

 তাঁহাকে পত্রিকা পড়িতে দেওয়া হইত না। তাঁহার মত একজন বিশিষ্ট ও মর্য্যাদাসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতাকে বহির্জ্জগৎ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অজ্ঞ রাখার চেষ্টা নির্য্যাতন ছাড়া আর কিছু নয় এবং এ যন্ত্রণা যে ভোগ করিয়াছে সে-ই শুধু আমার কথার সত্যতা অনুধাবন করিতে পারিবে। উপরন্তু তাঁহার কারাবাসের অধিকাংশ সময় ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল এবং যে উদ্দেশ্যে তিনি লড়িয়াছিলেন তাঁহার অবর্ত্তমানে উহা সাফল্যের পথে অগ্রসর হইয়া চলিয়াছে—এমন কোনও সান্ত্বনাও তিনি খুঁজিয়া পান নাই।

 তাঁহার দৈহিক যন্ত্রণার বিষয়ে যত কম বলা যায় ততই ভাল। তিনি পেনাল কোডের ধারানুযায়ী অভিযুক্ত হইয়াছিলেন এবং এখনকার রাজনৈতিক বন্দীদের অপেক্ষা অনেক বেশী কঠোর বিধিনিষেধ তাঁহাকে মানিয়া চলিতে হইত। ঐ সময়ে তিনি বহুমূত্র রোগে ভুগিতেছিলেন। এখন মান্দালয়ের জলবায়ু যেরূপ, লোকমান্য যখন এখানে ছিলেন তখনও উহা অবশ্যই সেরূপ ছিল। তার যদি এখনকার যুবকেরাও স্বীকার করেন যে, উহা লোককে দুর্ব্বল করিয়া ফেলে, অজীর্ণতা ও বাতরোগ ডাকিয়া আনে এবং প্রাণশক্তি ধীরে ধীরে নিশ্চিতরূপে ধ্বংস করিয়া দেয় তাহা হইলে লোকমান্যের মত একজন পরিণতবয়স্ক ব্যক্তিকে কি যন্ত্রণাই না ভোগ করিতে হইয়াছে!

 জেলের মধ্যে লোকমান্য নীরবে যে কষ্ট সহ্য করিয়াছেন তাহার কতটুকুই বা আমরা জানি! যে সকল যন্ত্রণা একজন বন্দীর জীবনকে মাঝে মাঝে দুঃসহ করিয়া তোলে সে সম্বন্ধে কয়জনই বা খবর রাখে! গীতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ ছিলেন বলিয়াই তিনি হয়তো এ সকল যন্ত্রণার উর্দ্ধে উঠিতে পারিয়াছিলেন এবং এ সম্বন্ধে কখনও তিনি কাহাকেও কিছু বলেন নাই।

১৬৬