পাতা:তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৪
তরুণের স্বপ্ন

ভাবপ্রবণতা ও কল্পনাশক্তি আছে—তাই বাঙ্গালী বর্ত্তমান বাস্তব জীবনের সকল ত্রুটি, অক্ষমতা, অসাফল্যকে অগ্রাহ্য ক’রে মহান আদর্শ কল্পনা করতে পারে—সেই আদর্শের ধ্যানে ডুবে যেতে পারে এবং আপাতদৃষ্টিতে যাহা অসাধ্য, তাহা সাধন করবার চেষ্টা করতে পারে। এই কল্পনা শক্তি ও আত্মবিশ্বাস আছে বলেই বাঙ্গলা দেশে এত সাধক জন্মেছে এবং এখনও জন্মাবে। এই কারণে দুঃখ কষ্ট ও অত্যাচারের চাপে বাঙ্গালীর মেরুদণ্ড কখনও ভাঙ্গবে না। যে জাতির idealism (আদর্শ-প্রীতি) আছে সে জাতি তার আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য যন্ত্রণাক্লেশ সানন্দে বরণ করে নিতে পারে।

 অনেকে মনে করেন যে, suffering-এর (দুঃখ) মধ্যে বুঝি শুধু কষ্টই আছে, কিন্তু এ কথা সত্য নয়। Suffering-এর মধ্যে কষ্ট যেমন আছে—তেমনি একটা অপার আনন্দও আছে। এই আনন্দবোধ যার হয় নি তার কাছে কষ্ট শুধু কষ্টই; সে ব্যক্তি দুঃখ কষ্টের নিষ্পেষণে অভিভূত হয়ে পড়ে। কিন্তু যে ব্যক্তি দুঃখ কষ্টের ভিতর একটা অনির্ব্বচনীয় আনন্দের আস্বাদ পেয়েছে—তার কাজে suffering একটা গৌরবের জিনিষ, সে দুঃখ কষ্টের চাপে মুমূর্ষু না হয়ে আরও শক্তিমান ও মহীয়ান হয়ে ওঠে। এখন জিজ্ঞাস্য বিষয় এই—“আনন্দের উৎস কোথায়?” ঘন ঘটাচ্ছন্ন অমানিশায় যে বিজলী চমকায়, তার উৎপত্তি কোথায়?” আমার মনে হয়, এই আনন্দের উৎপত্তি আদর্শানুরাগ থেকে। যে ব্যক্তি কোনও মহান আদর্শকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসার দরুণ দুঃখ যন্ত্রণা পায়, তার কাছে দুঃখ ক্লেশ অর্থহীন নয়। দুঃখ তার কাছে রূপান্তরিত হয়ে আনন্দ ব’লে প্রতীয়মান হয় এবং সেই আনন্দ অমৃতের মত তার শিরায় শিরায় শক্তি সঞ্চার করে দেয়। আদর্শের চরণে যে