পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নিশ্চয়ই আমাদের স্বাভাবিক সহিষ্ণুতার শক্তি অনেকখানি বাড়িয়ে তোলে। Bertrand Russell যখন বলছেন যে, জীবনে এমন সমস্ত ট্রাজেডি আছে যার হাত থেকে মানুষ নিষ্কৃতিই পেতে চায়, তখন ত তিনি খাঁটী সংসারী লোকের অভিমতই প্রকাশ করেছেন এবং আমার বিশ্বাস যে কেবল নিষ্কলঙ্ক সাধু ব্যক্তি অথবা সাধুত্বের ভাণ করে যে ভণ্ড, সে-ই এ কথার প্রতিবাদ করবে।

 যারা ভাবুক বা তত্ত্বজ্ঞানী নয় তাদের যন্ত্রণাটা সম্পূর্ণ নিরবচ্ছিন্ন মনে করাটা হয়ত তোমার ঠিক হচ্ছে না। তত্ত্বজ্ঞানহীনদের (abstract point of view থেকে আমি তাদের তত্ত্বজ্ঞানহীনই বলি) নিজেদেরও একটা idealism আছে। তারা যাকে পূজার সামগ্রী মনে করে শ্রদ্ধা করে ও ভালবাসে নানা প্রকার দুঃখ যন্ত্রণার সঙ্গে যুদ্ধ করবার সময় সেই ভালবাসার উৎস হতেই তারা সাহস ও ভরসা পায়। এখানে আমার সঙ্গে যারা কারাযন্ত্রণা ভোগ করছে, তাদের মধ্যে এমন অনেক আছে যারা ভাবুক বা দার্শনিক নয়, তবুও তারা শান্তভাবে যন্ত্রণা ভোগ করে এবং বীরের মত সহ্য করে। Technical অর্থে তারা দার্শনিক না হতে পারে, কিন্তু তাদের আমি সম্পূর্ণরূপে ভাব-বিবর্জ্জিত মনে করতে পারি না। সম্ভবতঃ জগতের সর্ব্বত্র যারা কর্ম্মী তাদের সম্বন্ধে সাধারণতঃ একথা খাটে।

 সাধারণের মনে একটা ধারণা আছে যে, অপরাধীদের যখন ফাঁসিকাঠে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তাদের একটা স্নায়বিক দৌর্ব্বল্য আসে এবং যারা কোন মহৎ উদ্দেশ্য-সাধনের জন্য প্রাণ দেয় তারাই বীরের মত মরতে পারে। এ ধারণাটা ঠিক নয়। এ সম্বন্ধে আমি কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ অপরাধীরা সাহসের সহিত প্রাণ দেয়, এবং ফাঁসির দড়ি তাদের গলায় বসাবার আগে ভগবানের পায়েই আত্মনিবেদন করে। একেবারে ভেঙ্গে মুষড়ে পড়তে বড় একটা

১৩৮