পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কোনও সন্দেহ নেই যে, যদি এরা কোনও দিন কর্ম্মশক্তির প্রেরণা খুঁজে পায় তাহলে সমৃদ্ধির পথে এরা অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবে।

 তুমি বোধহয় জান বর্ম্মাতে স্ত্রী ও পুরুষ মিলিয়ে শিক্ষিতের শতকরা হার ভারতবর্ষের যে কোনও প্রদেশের চেয়ে অনেক বেশী। ধর্ম্মীয় সেবা-প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় প্রথায় আশ্চর্য্য অল্প খরচে যে প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে তার ফলেই সম্ভব হয়েছে এটা। বর্ম্মাতে আজও প্রত্যেক ছেলেকে কয়েক বছর না হলেও অন্ততঃ কয়েক মাস ব্রহ্মচর্য্য পালন করে গুরুর কাছে পাঠ নিতে হয়। এ প্রথার শুধু যে একটা শিক্ষাগত ও নৈতিক মূল্য আছে তা নয়, এর আর একটা দিকও আছে—ধনীদরিদ্রনির্ব্বিশেষে সবাই একসঙ্গে মানুষ হবার সুযোগ পায়। সারা দেশ জুড়েই এই অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা চালু আছে।

 তোমার পূর্ব্বেকার পত্রে তুমি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলে যে, যারা দার্শনিক নয় তারা কারাজীবনের মধ্যে শুধু যন্ত্রণাই খুঁজে পায়। এটা পুরোপুরি সত্য নয়। এমন অনেক লোক আছে যারা দার্শনিক নয় কিন্তু কোনও না কোনও আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত। গত মহাযুদ্ধের সময় বহু লোক দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নানা প্রকার দুঃখ-লাঞ্ছনা ভোগ করেছে, তারা কেউ দার্শনিক ছিল না। যতক্ষণ আদর্শের প্রেরণা থাকে, আমার বিশ্বাস যেকোনও লোক সেরকম সাহস অবলম্বন করে আনন্দের সঙ্গে দুঃখকে বরণ করে নিতে পারে। একথাও ঠিক যে, দার্শনিকের পক্ষে এ সব দুঃখ-যন্ত্রণার দ্বারা আত্মিক উন্নতি ঘটানো সম্ভব; এবং একে মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের কাজেও লাগাতে পারে সে। সুতরাং একথা কি ঠিক নয় যে, আমাদের মধ্যে দার্শনিকতার বোধ এখনও জন্মায়নি, আর সে বোধকে জাগ্রত করতে হলে এই যন্ত্রণানুভূতির প্রয়োজন আছে?

১৭৯