পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

“মনে হইতেছে যেন আমি পৃথিবীর এক অধ্যায় শেষ করিয়া পরবর্ত্তী অধ্যায় প্রবেশের পূর্ব্বে ধ্যানমগ্ন রহিয়াছি,” অথবা আপনি ওই লেখকেরই নিম্নোক্ত পংক্তিগুলির পুনরাবৃত্তি করিবেন—“ইহার দ্বারা এই চেতনা আমাদের হয় যে আমরা সুনিশ্চিন্ত জীবন যাত্রা হইতে ছিন্ন হইয়া এক সংশয়াচ্ছন্ন পৃথিবীর দিকে ভাসিয়া চলিয়াছি।” বলা বাহুল্য যে কেহই দুইটির মধ্যে প্রথমটি বাছিয়া লইবেন না।

 আমার মনে হয় বেশ কয়েকদিন মাটি দেখিতে না পাইয়া আবার মাটি দেখিতে পাইবেন যখন এডেনের নিকটবর্ত্তী হইবেন, কে জানে তখন কেমন লাগিবে কয়দিন অদর্শনের পর আপনি আবার মাটি দেখিবেন।

 সমুদ্রে নির্ম্মল ও পরিপূর্ণ সূর্য্যাস্ত দেখিতে পাইবেন। সে এক রমণীয় দৃশ্য। যাহারা কখনও সমুদ্রে যায় নাই, তাহারা সত্যই বঞ্চিত—ইহা এমনই সুন্দর। সমুদ্রে সূর্য্যাস্তের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা লিখিয়া আপনি কি আমাকে আনন্দ দিবেন না? কি সুন্দর! অস্তগামী সূর্য্যের আভায় সীমাহীন সমুদ্র উদ্ভাসিত প্লাবিত; তরঙ্গরাশির সহিত আলোকের ওঠা পড়ার খেলা! পশ্চিম দিগন্ত অস্তগামী সূর্য্যের কিরণে রক্ত-গোলাপের আভায় রঙিন। আবার পরক্ষণে দেখিতে পাইবেন, শান্ত পদক্ষেপে আকাশে সন্ধ্যার আগমন অর্দ্ধঘণ্টায় দিগন্ত আঁধার আচ্ছন্ন হইয়া গিয়া শুধু ইতস্ততঃ স্বর্গীয় আলোকণিকার জ্যোতি! ইহা এত সুন্দর এমন নয়নাভিরাম ও প্রাণস্পর্শী!

 তারপর একটানা পক্ষকালের সমুদ্র ভ্রমণের পর আসিয়া পৌঁছিবেন আর এক পৃথিবীর কোলাহলে,—বিদেশীদের মধ্যে, শ্বেতচর্ম্ম সুনীলাক্ষ বিদেশী। এই বিচিত্র পরিবেশ, পূর্ব্ব পরিবেশের তুলনায় অদ্ভুত লাগিবে না কি? অবশ্য দু-একদিনের মধ্যেই ইহা চলিয়া যাইবে।

 জানি না কি লিখিলাম; পাগলের মত যাহা খুশী। আশা করি

২৯