পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হয় না—তা নয়। কিন্তু শুধু কি কষ্টই পাই? আর এই সব সুখদুঃখময় স্মৃতি, যার মধ্যে ব্যথার অংশ এখন বেশী হয়ে পড়েছে— তা ছেড়ে আমি বাঁচব কি করে? সন্ন্যাসের মার্গ যখন নিই নাই—তখন বাহিরের স্মৃতি—দুঃখদায়ক হলেও—কি করে ভুলব? শত যন্ত্রণা পেলেও সে সব স্মৃতি আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে।

 আপনি নির্জ্জন বাস করতে চান—কিন্তু নির্জ্জন বাসেই কি শান্তি পাবেন? কে বলতে পারে? প্রাণটা যদি আরও ছোট হইত—তা হলে হয়তো বা পেতেন। আপনার শরীরের সংবাদ ২।৩ দিন হইল আমি প্রথমে সংবাদপত্রে পাই—তখন ইচ্ছা হল একবার টেলিগ্রাম করে খবর লই। তারপর ভাবলাম যে ২।১ দিনের মধ্যে যখন এখান থেকে চলে যাচ্ছি তখন ম্যাণ্ডেলে ফিরে খবর পাবার চেষ্টা করব। তারপর আপনার চিঠি আমার হাতে এল।

 বন্দী অবস্থায় আর কতদিন থাকতে হবে তা শুধু ভগবান জানেন। তবে যতদিন থাকতে হউক না কেন—আমাকে যে সহ্য করবার ক্ষমতা দিয়েছেন তাতেই আমি সন্তুষ্ট। এক এক সময়ে শুধু এক এক সময়ে কেন, প্রায়ই মনে হয় আমি এখন বাহিরে যাবার জন্য কায়মনে প্রস্তুত নই। যে উদ্দেশ্যে ভগবান আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন তা এখনও সফল হয় নাই এবং আমার কারাবাসকালীন শিক্ষা এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে! স্থিরভাবে যখনই ভেবে দেখি তখনই মনে হয় যে আমার পক্ষে এখন কারাবাসই প্রশস্ত। তবে প্রাণ সব সময়ে মানতে চায় না। শুধু আপন জন নয়, আজ বাঙ্গলাদেশ, সমগ্র ভারতবর্ষ আমার কাছে যেন অশেষ মাধুরী-মাখা উজ্জ্বল স্বপ্ন। বাস্তব দূরে সরে রয়েছে—আমি এই স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে রয়েছি। এই স্বপ্নের পেছনে যে বাস্তব সত্য তার জন্য মধ্যে মধ্যে প্রাণ আকুল হয়ে উঠে। আমার মত কঠিন হৃদয় লোকের পক্ষে এই সাময়িক উদ্বেল ভাব চেপে রাখা সম্ভবপর—

২৬৩