পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৩৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যথেষ্ট আছে—বোধ হয় একটু বেশীই আছে। তবুও আমরা মা-কে চাই কেন? তার কারণ এই যে মা-কে বাদ দিয়া কোনও পূজাই হয় না। আমাদের সমাজের ইতিহাসে যখনই বিপদ-আপদ জুটিয়াছে তখনই মা-র আবাহন আমরা করিয়াছি। আমাদের অন্তরে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ যাহা কিছু পাইয়াছি তাহা লইয়াই মাতৃমূর্ত্তি রচনা করিয়াছি। ‘বন্দে মাতরম্’ গান লইয়া আমাদের জাতীয় অভিযান শুরু হইয়াছে। তাই আজ এমনভাবে মা-কে ডাকিতেছি—কিন্তু পাষাণীর হৃদয় কি গলিবে না?

 সন্তান বলিয়া যখন নিজের কাছে নিজের পরিচয় দিতেছি তখন যেন আমার দ্বারা মা-র নাম কলঙ্কিত না হয় সেই আশীর্ব্বাদই করুন। মা-র উপযুক্ত সন্তান হইব—এত বড় স্পর্দ্ধা আমার নাই।

 যে কণ্টকময় পথে চলিয়াছি শেষ পর্য্যন্ত যেন এমনই ভাবে চলিয়া যাইতে পারি—সেই আশীর্ব্বাদ করুন। সন্ন্যাসের শূন্যতার মধ্যে যেন জীবন শুকাইয়া না যায়; এই শূন্যতার মধ্যে যে অমৃত লুক্কায়িত আছে তার সংস্পর্শে যেন জীবনটা মঙ্গলের দিকে ফুটিয়া উঠে—সেই আশীর্ব্বাদ চাই। আপনার আশীর্ব্বাদের মূল্য আমার কাছে কত— তাহা কি বলিতে হইবে?

 একদিকে আমার ধৃষ্টতার যেমন অবধি নাই, অপরদিকে নিজের অযোগ্যতার চিন্তা আমাকে নিরন্তর দগ্ধ করে। এই Conflictটা কাল্পনিক নয়—বাস্তব সত্য। ভগবানের নিকট সর্ব্বদা প্রার্থনা করি “তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি।” তবুও সময়ে সময়ে আশঙ্কা হয়, ভয় হয়— বুঝি, দেশ যা চায় তাহা দিতে পারিব না। বুঝি, বামন হইয়া চন্দ্রমা স্পর্শের চেষ্টায় মাঝ গঙ্গায় ভরাডুবি হইয়া মরিব। মা, তুমি কি আমায় অভয় বাণী শুনাবে?

 আর একটা কথা বলিব—অনেকদিন বলিব বলিব করিয়া বলিতে পারি নাই। সন্তানের একটা কর্ত্তব্য আছে—একটা অধিকার আছে। সেবা-র অধিকারে কি চিরকাল বঞ্চিত হইব? চিরকাল কি ‘পর’

৩৩৫