পাতা:আত্মচরিত (সিগনেট প্রেস) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিনিও আসিয়া এক পাশে বা বসিলেন। কেশববােব কোনো মতেই বিশেষ সংবাদ দিতে চাহিলেন না, বলিলেন, “এখন কোনো সংবাদ দিতে পারি না।” আমি বলিলাম, “এই সংবাদে ব্রাহমদের মন অতিশয় উত্তেজিত। আপনার উচিত আমাদিগকে সকল সংবাদ দেওয়া। লোকে তো আপনার নিকট আসে না, আমাদিগকেই পথেঘাটে ধরে, আমাদের সঙ্গে ঝগড়া করে। আমরা উত্তর দিতে পারি, লোককে শান্ত করিতে পারি, এমন সংবাদ আমাদের কাছে থাকা আবশ্যক।” তিনি কোনোক্রমেই কিছু বলিলেন না। অবশেষে আমি যখন এই ভাবের কথা বলিলাম, “খাস্তগির মহাশয়ের কন্যার বিবাহে ব্রাহসমাজের আদশ রক্ষা হয় নাই বলিয়া তাঁহাকে আপনারাই কত চাপিয়া ধরিয়াছিলেন। আপনার কন্যার বিবাহে ব্রাহমদের অবলম্পিাবত কোনো নিয়মের ব্যতিক্রম হইলে ব্রাহোমরা আবার সেইরাপ করিতে পারে,” তখন কেশববাব, অতিশয় বিরক্ত হইলেন। আমি পাবে কখনো তাঁহাকে এত উত্তেজিত দেখি নাই। আমাদের মনে হইল, আর তাঁহাকে বিরক্ত করা উচিত নয়। আমরা উঠিয়া দাঁড়াইলাম, বলিলাম, “আপনি বিরক্ত হইতেছেন, তবে এ কথা থাক।” এই বলিয়া আমরা চলিয়া আসিলাম । অতঃপর আমাদের দলে মন্ত্রণা চলিল। এইবার সমাদশী দল, সত্রী-স্বাধীনতার দল, নিয়মতলেত্রর দল, সকল দল এক হইল। এমন কি, বন্ধ শিবচন্দ্র দেব মহাশয় পর্যন্ত আমাদের দলে যোগ দিলেন। সকলেই অনভব করিতে লাগিলেন, ব্রাহমসমাজের পক্ষে মহা বিপদ উপস্থিত। আমাদের মনে কি দভাবনা উপস্থিত হইয়াছিল, তাহা ভাষাতে বর্ণনা করিবার নহে। আনন্দমোহনবাব তখন মঙ্গেরে পরিবার রাখিয়া আসিয়া হাইকোটের নিকট আপনার চেম্বারে বাস করিতেন। আমি সবােদা তাঁহার নিকট যাইতাম এবং দজনে বসিয়া হয়-হায় করিতাম। এমন কতদিন গিয়াছে, আমি তাঁহার ভাবে সেই একটকু ঘরের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাদচারণা করিতেছেন। দরজনের মখেই কথা নাই। বহ ক্ষণ পরে এক-একবার কোঁচের নিকট আসিয়া দাঁড়াইয়া বলিতেছেন, “শিবনাথবাব, কি হবে ? কি করা যায় ?” কেশবচন্দ্রের নিকট প্রতিবাদ-পত্র। অবশেষে স্থির হইল যে, সকলে একদিন একত্রে বসা আবশ্যক। তদনসারে ৯৩নং কলেজ সন্ট্রীট ভবনে ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশনের হলে একদিন রাত্রে সকলে বসা গেল। কেশববাবকে কিছ বলা উচিত কি না, যদি বলা হয়, কি বলা হইবে, কে কে তাহাতে সবাক্ষর করবেন, এই বিচারে রাত্রি প্রায় দইটা বাজিয়া গেল। স্থির হইল, একখানি প্রতিবাদ-পত্রে কয়েক ব্যক্তি সবাক্ষর করিয়া কেশববাবার হাতে দেওয়া হইবে। কিন্তু সেই গভীর রাত্রে বন্ধদ্বয় দরগামোহন দাস ও দাবারকানাথ গাঙ্গালী বলিলেন, “এই প্রতিবাদ-পত্র প্রেরণের অনিবার্য ফল, কেশববাব তাহার সমচিত ব্যবহার না করিলে সর্বতন্ত্র সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। তাহা করিতে তোমরা প্রস্তুত আছ কি না ?” আনন্দমোহনবাব ও আমি বলিলাম, “স্বতন্ত্র সমাজ প্রতিস্ঠা এখনো আমাদের মনে নাই, সে বিষয়ে কথা দিতে পারি না। যেটকু আপাতত কতব্য বোধ হইতেছে, তাহাই করিতে যাইতেছি। ফলাফল জানি না।” দােগামোহনবাব বলিলেন, “ছেলেখেলার মধ্যে আমরা নাই। যাঁরা আমাদের সঙ্গে সমগ্র পথ যাইতে প্রস্তুত নন, তাঁদের সঙ্গে স্বাক্ষর করিব না।” এই বলিয়া তিনি ও দ্রবারিবাব চলিয়া •• ইহারা দাইজনে চলিয়া গেলে প্রতিবাদ-পত্রে উল্লেখ্য বিষয়গালি স্থির হইয়া গেল। SSS