পাতা:বারীন্দ্রের আত্মকাহিনী - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ob" বারীদ্রের আত্মকাহিনী צ নীচের প্রকৃতি উপরের তরঙ্গের চাপে যখন বশে থাকে তখন মনের আঙ্গিনায় কত কি দিব্য ভাব ও বিভূতি খেলিয়া যায় বটে, কিন্তু নীচের প্ৰকৃতি জাগিলে সেই দীন মলিন রিপুর মানুষ। সে জ্ঞান না থাকিলেও একদিন আন্তরদশা হইতে জাগিয়া হঠাৎ প্ৰাণ মনের অশুদ্ধি মলিনতা দেখিতে পাইলাম, ব্যাপারটা সে ভাবে বুঝিলাম না, বুঝিলাম ভক্তিরই চোখে । তখন মনে জাগিল রূপ গোস্বামীর কথা-যার স্ত্রী-পুরুষ জ্ঞান আছে, যার নীচের দেহ প্ৰাণই সার, তার গোপীপ্ৰেম-শুদ্ধ প্ৰেম হয় না । আমার হঠাৎ মনে জাগিল যে, প্ৰবৃত্তির হাত হইতে উদ্ধার হইতে আমায় জ্ঞানের সাধনা করিতে হইবে । এই অবস্থা লইয়া আমার আন্দামান যাত্ৰা । আমার সারা আন্দামান জীবন একখানি বই সম্বল করিয়া জ্ঞানের সাধনায় কাটিয়াছে। বইখানি যোগবশিষ্ঠ রামায়ণ, মাঝে মাঝে শঙ্করের বইগুলি ও পঞ্চদশীও পড়িতাম । কিন্তু প্ৰায় চার পাচ বছর আমি অন্য কোন বই হাতে করি নাই। উপেন তখন শঙ্কর বিদ্বেষী, সে রাগ করিত, বলিত, “ও বইখানা পুড়িয়ে ফেল”। আমি কোন কথা শুনিতাম না, পরের কথা অযথা শুনার রোগ আমার কোন দিনই ছিল না । জ্ঞান-বিচারে অনেক ব্যাপার ঘটিল, চোখের সামনে সূক্ষ্মজগৎ খুলিল; সুক্ষ্মজগৎ কি জানিতাম না, কিন্তু এই বাস্তব জগতের অপেক্ষাও সত্যতর উজ্জ্বলতর জীব ও জগৎচিত্ৰ দিবারাত্র যখন তখন দেখিতাম ; তখন শ্ৰীরামকৃষ্ণের সেই কথা মনে পড়িল, “যা নাই ভাণ্ডে তা’ নাই ব্ৰহ্মাণ্ডে” । জ্ঞান বিচারে আমার রিপুর শক্তি মরিয়া আসিল, মৌন গাম্ভীৰ্য্য অভ্যাস হইল, মনকে তার বিষয় আসক্তি হইতে স্বেচ্ছায় টানিয়া ফিরাইবার বল জন্মিল, আর ক্রমে শুখাইয়া আসিল প্ৰেম, স্নেহ, মমতা, দয়া আদি সব কোমল বৃত্তি । জগতে সকলই মায়া, তবে আর কিসের কি ? বামে দক্ষিণে উৰ্দ্ধে নিয়ে অখণ্ড ব্যোম বা জলরাশি জ্ঞান করিতে করিতে এক শান্ত গম্ভীর শীতল মগ্ন আনন্দ উপর হইতে নামিয়া আসিত, আমি বুদ হইয়া সেই