পাতা:বারীন্দ্রের আত্মকাহিনী - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9 বারীদ্রের আত্মকাহিনী খুজিতে আসিয়া সাধুতো মিলিলই না, মিলিল সাধুর বেশে এক তত্ত্বজ্ঞানহীন শুষ্ক জ্ঞানী। নৰ্ম্মাদার জলের স্রোতে শব্বাসনে গা ভাসাইয়া ভাসাইয়া তিনি সমস্ত পাতঞ্জল যোগসূত্র নিত্য আবৃত্তি করেন, শ্রোতা পাইলে অনর্গল “যোগশ্চিত্তবৃত্তির্নিরোধঃ” সম্বন্ধে কর্কশ বক্তৃতা ঝাড়েন, চুরাশী আসনের কসরতে লোকের চমক লাগাইয়া পারমার্থিক সার্কাসে বাহবা নেন, শ্বাসরোধ করিয়া ভগবানের দেওয়া জিহবাটাকে কণ্ঠে প্ৰবেশ করাইয়া, পেটের চামড়া পিঠে ঠেকাইয়া, তাহার সাধু বলিয়া কষ্টাৰ্জিত সুনাম কষ্টে রক্ষা করেন। ভগবানের বৈকুণ্ঠের দুয়ারের অনেক বাহিরে তাহার এই ধৰ্ম্মের দোকান ; ভগবানের স্বরূপ জানিবার জন্য প্রশ্ন করিলে কথার ঝড়ে সেখানে প্ৰাণ বঁাচান দায় হয়। ব্যাপারখানা দেখিয়া সহজে ভগ্নোদ্যম উপেন নিরাশ হইয়া দেশে ফিরিল। আমি তখন একরকম ‘মরিয়া’, কাজেই তঁহারই কাছে আসন শিখিতে বসিয়া গেলাম । এই মঠে একটি বেদ-পাঠশালা ছিল, তাহার ভার ছিল একজন ব্ৰহ্মচারীর উপর। ব্ৰহ্মচারী। তখনও যুবক, অনেক খুজিয়াও ভগবানের দেখা সে তখনও পায় নাই। সে বলিল, “বাবুজী ! সরে পড়, এর কাছে কিছু নাই।” এইরূপ ইতস্ততের মধ্যে একদিন ল্যাঙোট কফ্ৰিয়া একটি নির্জন ঘরে মাথা নীচু ও পা উঁচু করিয়া বৃক্ষাসন করিতেছি, হঠাৎ একটি লোক ঘরে প্রবেশ করিল। সে অযাচিত ভাবে আমায় ধরিয়া আসনে স্থির হইবার জন্য সাহায্য করিতে লাগিল ! ভগবানের দেখা পাইবার আশায়, উল্টা ডিগবাজী খাইতে খাইতে শেষে গলদঘৰ্ম্ম দশায় অগত্যা বসিয়া হঁপাইতে হাঁপাইতে দেখিলাম, মানুষটি খৰ্ব্বকায়, গৌরকান্তি, চক্ষু নীল, মাথায় তার প্রকাণ্ড সাদা পাগড়ী, পায়ে নাগরা, বেশভুষার বড় একটা পারিপাট্য নাই, কিন্তু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। দেহ ভরিয়া যেন একটি অনির্বচনীয় স্নিগ্ধ শুচিত বিরাজ করিতেছে। লোকটি চলিয়া গেলে ব্ৰহ্মচারীকে পরিচয় জিজ্ঞাসা করায় জানিলাম, বেদ-পাঠশালার শিক্ষক হইয়া ইহারই আসার কথা ছিল,