পাতা:স্মৃতিকথা (জ্ঞানদানন্দিনী দেবী).djvu/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পুরাতনী 

মহিলা কোন সূত্রে বাবামশায়ের সব খবর শুনতে পেয়ে তাঁকে কলকাতায় এনে একটা বেশী আয়ের কাজে নিযুক্ত করে, নিজের বাড়ীতে যত্নে রাখেন। তিনি বরাবর কলকাতায় থাকতেন, কেবল পুজোর সময় একমাস বাড়ী আসতেন। সেই সময় আমি মায়ের গর্ভে ছিলুম। মা আমায় যখন-তখন বলতেন যে, তুমি আমার গর্ভে এসে অবধি আমার দারিদ্র্য-দুঃখের শেষ হয়েছে।

 সেই মহিলাটি বাবামশায়কে দাদা বলে ডাকতেন। আমি জন্মাবার পর, যখন আমার অন্নপ্রাশনের সময় হল তখন আমার এই ধনী পিসিমা আমার অন্নপ্রাশনের সমস্ত গয়না কাপড় ও খরচপত্র পাঠিয়ে দেন শুনেছি। আর কোন সময় নরেন্দ্রপুরের কাছাকাছি গ্রামে খুব চুরি-ডাকাতি হচ্ছে শুনে পিসিমা আমাদের বাড়ী পাহারার জন্যে নিজের খরচে দুজন পাঠান দরওয়ান রাখিয়ে দিয়েছিলেন। তারা আমাকে সকালে-বিকালে কোলে কোরে নিয়ে বেড়াত, সেটা এখনও মনে আছে। আমার যখন আড়াই বছর বয়স, তখন পিসিমার বিশেষ অনুরোধে বাবামশায় মাকে ও আমাকে তাঁর ওখানে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমরা কিছুদিন পুজোর সময় সেখানে গিয়েছিলুম। সেই অনভ্যস্ত প্রকাণ্ড বাড়ী, জাঁকজমক ও মেলাই চাকর-দাসীর মাঝখানে মা যেন সর্বদাই ভীত সঙ্কুচিত হয়ে থাকতেন। বাড়ীর কর্ত্রী পিতার ঘরজামাই মেয়ে ছিলেন এবং তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর কলকাতার অট্টালিকার ও জমিদারীর অধিকারিণী হন। তিনি অসাধারণ দানশীলা ছিলেন। পুজোর সময় জমিদারীর আমলা ও বাড়ীর চাকর-দাসীদের নতুন কাপড় বিতরণ করবার সময় তিনি মাকে সেই ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে নিজের কাছে বসালেন। মা দেখলেন যে, একটা বড়ঘরের মেঝে থেকে কড়িকাঠ পর্যন্ত নববস্ত্রে পরিপূর্ণ। একে একে ছোটবড় সমস্ত কর্মচারী ও চাকর-দাসী আসতে লাগ্‌ল আর তিনি তাদের নতুন কাপড় দিতে লাগলেন। মায়ের মনে হল যে, সে যেন এক অফুরান বিরাট দানব্যাপার। শুনেছি ঐ সময়েই নাকি আমার এই পিসিমা