পাতা:স্মৃতিকথা (জ্ঞানদানন্দিনী দেবী).djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৩
পুরাতনী  

 আমার শাশুড়ীর একটু স্থূল শরীর ছিল, তাই বেশি নড়াচড়া করতে পারতেন না। সংসারের ভাঁড়ারাদির কাজ বোধ হয় দপ্তরখানা থেকেই করা হত। দৈনিক বাজারে আমাদের কিছু করতে হত না। কেবল পৌষপার্বণে রাশীকৃত পিঠে গড়তে হত বলে লোক কম পড়লে মেয়েদের বউদের ডাক পড়ত। ঝাল কাসুন্দি বড় বড় তোলোহাঁড়িতে করা হত। কাঠি দিয়ে জল মাপা হত, তার আবার অনেক বিচার, একটুকুতেই অশুচি হত। ক্রিয়া-কর্মে আনন্দনাড়ু করবারও ধুম পড়ে যেত। আমার মনে পড়ে বাবামশায় যখন বাড়ী থাকতেন আমার শাশুড়ীকে একটু রাত করে ডেকে পাঠাতেন, ছেলেরা সব শুতে গেলে। আর মা একখানি ধোয়া সুতি শাড়ি পরতেন, তারপর একটু আতর মাখতেন; এই ছিল তাঁর রাত্রের সাজ।

 একবার জমিদারীর আয় কমে গিয়েছিল। তখন আমার শ্বশুর বলে পাঠালেন বউদের রাঁধতে শেখাও। রান্নাঘরের রান্না বড় সুবিধের হত না। দপ্তরখানা থেকে ঘি তেল এনে বামুনরা চুরি করত। কেবল বাবামশায় যখন বাড়ী থাকতেন মা রান্নাঘরে নিজে গিয়ে বসতেন। তখন তারা একটু ভয়ে থাকত। কৈলাস মুখুজ্জে বলে একজন খুব আমুদে সরকার ছিল। ছেলে বাবুদের সঙ্গে রঙ্গরস করত। সে বামুনদের চুরি ধরবার মতলবে এক-একদিন রান্নাঘরে খেত। তারা ফন্দি করে কাঁচাকাঠ উনুনে দিয়ে খুব ধোঁয়া বার করলে, যাতে মুখুজ্জে দেখতে না পায়। কিন্তু চোরাই মাল রাখবে কোথায়? তাই একজন বামুন নিজের পেটে চালাবার উপক্রম যেই করেছে অমনি কৈলাস চোখমুখ পুঁছে তাকে ক্যাঁক করে চেপে ধরেছে। আমরা রান্নাঘরের রান্না অল্পই খেতুম। তবে দুএক টাকা করে মাসহা্রা পেতুম, তাই দিয়ে কখন কখন সখ করে কিছু খাবার আনিয়ে আমোদ করে খেতুম। একাদশীর দিন দাসীরা পয়সা চাইত, দু এক পয়সা পেলেই খুশি হয়ে যেত। তাদের দিয়ে কখন কাঁচা আম কি জারক লেবু