পাতা:পালামৌ.djvu/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
পালামৌ


দেখা যায়, সকলেই সাহসী, ইউরোপীয় সভ্যদের অপেক্ষাও অনেক অংশে সাহসী; হেতু ফলাফলবোধ নাই। আমি তাহাই আমার সাহসের বিশেষ গৌরব করি না। সভ্যতার সঙ্গে সঙ্গে সাহসের ভাগ কমিয়া আইসে; পেনাল কোড যত ভালো হয় সাহস তত অন্তর্হিত হয়। এখন এ সকল কচকচি যাক।

 যুবার সঙ্গে কতক দূর গেলে সে আমায় বলিল, “বাঘটি আমি স্বহস্তে মারিব।” আমি হাসিয়া সম্মত হইলাম। যুবা আর কোন কথা না বলিয়া চলিল। তখন হইতে নিজের প্রতি আমার কিঞ্চিৎ ভাল বাসার সঞ্চার হইল। “হস্তে মারিব” এই কথায় বুঝাইয়াছিল, যে পরহস্তে বাঘ মারা সম্ভব; আমি সাহেববেশধারী, অবশ্য বাঘ মারিলে মারিতে পারি, যুবা এ কথা নিশ্চয় ভাবিয়াছিল, তাহাতেই কৃতার্থ হইয়াছিলাম। তাহার পর কতক দূর গিয়া উভয়ে পাহাড়ে উঠিতে লাগিলাম। যুবা অগ্রে, আমি পশ্চাতে। যুবার স্কন্ধে টাঙ্গী, সে একবার তাহা স্কন্ধ হইতে নামাইয়া তীক্ষ্ণতা পরীক্ষা করিয়া দেখিল, তাহার পর কতক দূর গিয়া মৃদুস্বরে আমাকে বলিল, আপনি জুতা খুলুন, শব্দ হইতেছে। আমি জুতা খুলিয়া খালি পায় চলিতে লাগিলাম, আবার কতক দূর গিয়া বলিল, “আপনি এইখানে দাঁড়ান, আমি একবার অনুসন্ধান করিয়া আসি।” আমি দাঁড়াইয়া থাকিলাম, যুবা চলিয়া গেল। প্রায় দণ্ডেক পরে যুবা আসিয়া অতি প্রফুল্লবদনে বলিল, “হইয়াছে, সন্ধান পাইয়াছি, শীঘ্র আসুন, বাঘ নিদ্রা যাইতেছে।” আমি সঙ্গে গিয়া দেখি, পাহাড়ের একস্থানে প্রকাণ্ড দীর্ঘিকার ন্যায় একটি গর্ত্ত বা গুহা আছে, তাহার মধ্যস্থানে প্রস্তরনির্ম্মিত একটি কুটীর, চতুঃপার্শ্বস্থ স্থান তাহার প্রাঙ্গণস্বরূপ। যুবা সেই গর্ত্তের নিকটে এক স্থানে দাঁড়াইয়া অতি সাবধানে ব্যাঘ্র দেখাইল। প্রাঙ্গণের এক পার্শ্বে ব্যাঘ্র নিরীহ ভাল