পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৩
মাঝির ছেলে

 “ডর লাগে?

 “ডর? আমার ডরি?” কোমরে হাত রেখে পিছন দিকে বেঁকে হো হে করে ডেনিস হাসতে আরম্ভ করে। ভিমনার কাছে নাগা ডেনিসের বেপরোয় বিপদসঙ্কুল জীবনযাত্রার কিছু কিছু গল্প শুনেছিল; একা একটি নৌকা নিয়ে তিনশ মাইল সমুদ্র অতিক্রম করার গল্পটা তার মনে পড়ে যায়। ঈর্ষার দৃষ্টিতে সে ডেনিসের হাসির ভঙ্গী দেখতে থাকে। রূপকথার জলদসু্যর সর্দার যেন সায়েবী পোশাক পরে সামনে দাড়িয়েছে তারণ। কোমরের কাছে পিস্তল লুকানো আছে, সে জানে,—ভিমনা বলেছে। এত তাড়াতাড়ি ডেনিস নাকি পিস্তল বার করে এনে গুলি করতে পারে যে মনে হয় যেন কি এক ম্যাজিকে তার খালি হাতে শূন্য থেকে পিস্তলটির আবির্ভাব হয়েছে।

 যাদববাবু রেলিং ঘেষে চুপচাপ দাড়িয়েছিলেন, তাঁর মুখে আজ একেবারেই কথা নেই। ভয় পেয়ে গেছেন? বিবেক কামড়াচ্ছে? অথবা জ্যোৎস্নারাতের সমুদ্র দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছেন? যাদববাবুকে নাগা ঠিক বুঝতে পারে না। অনেকরকম মানুষ মিলিয়ে যেন একটা মানুষ তৈরী হয়েছে।

 হিসাবী গৃহস্থ, অহঙ্কারী ভদ্রলোক, সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী, গরীব চাষী, মাঝি, মজুর, জ্ঞানী, বৃদ্ধ, উৎসাহী যুবক—সব রকম মানুষ থেকে কিছু কিছু নিয়ে যেন ভগবান তাকে গড়েছেন; কে বলতে পারে তার মনে এখন কি চিন্তার ধারা বয়ে যাচ্ছে!

 কতক্ষণ লঞ্চ চলছিল নাগার খেয়াল ছিল না। দূরে একটা আলো দেখা যেতে যাদববাবু জিজ্ঞাসা করলেন, 'কুতুবদিয়া লাইট-হাউস না, ভিমনা?”


 'হ, কুতুবদিয়া লাইট-হোঁস।”

 “জলকন্যা’ এগিয়ে যায় আর কোণাকুণি সামুনের দিকে অনেক দূরের আলোর চিহ্নটি ধীরে ধীরে পাশের দিকে সরে যেতে থাকে। আরও খানিকক্ষণ চলার পর লঞ্চের গতিবেগ কমে গেল, নাগা বুঝতে পারল লঞ্চ