পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৩৮

শেষ পর্যন্ত মোটামুটি এইটুকু নাগা বুঝতে পারে যে, মেয়েটিকে পরেশের খুব পছন্দ হয়েছে, এই মেয়েকে বিয়ে করতে না পারলে সে বাঁচবে না। আর যাদববাবুর কাছে সে চাকরি করে বলেই মেয়ের আত্মীয়-স্বজন তার সঙ্গে এই মেয়ের বিয়ে দেবে। অন্য কোথাও সে যদি ডবল মাইনেতে চাকরি করে তাহলে অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে বটে, কিন্তু এই মেয়েটির সঙ্গে বিয়ে হবে না।

 নাগা হেসে বলে, ‘রূপকথা কস্ নাকি? তার কথা শুইন য্যান ধাঁধাঁ লাগে, পরশা।’

 পরেশ ব্যাকুল হয়ে দিব্যি কেটে বলে যে তার একটা কথা মিথ্যা নয়, দুদিন পরেই সে সব জানতে পারবে। দয়া করে নাগা তার চাকরিটা শুধু এখন রক্ষা করুক, পরেশ চিরকাল তার কেনা হয়ে থাকবে। নাগা যদি ছোটকর্তাকে বলে যে কালকের ব্যাপারে পরেশের কোন দোষ ছিল না-

 ‘আমার দোষ ছিল কমু, এ্যাঁ?’

 পরেশ কথা বলতে পারে না। পরেশের কোন দোষ ছিল না যাদববাবুকে একথা বলার মানেই তো নাগার স্বীকার করা যে সমস্ত দোষ ছিল তার! পরেশের অবস্থা দেখে নাগার একটু দয়া হয়, তাকে অভয় দিয়ে সে বলে, ‘ডর নাই, ছোটকর্তা তরে খেদাইব না।’

 ‘খেদাইব না?’

 ‘ক্যামনে খেদাইব? তরে খেদাইলে বড়কর্তারে অপমান করা হইব না? বড়কর্তা জিদ্ কইরা আমাকে খেদাইয়া তরে রাখছে, বড়কর্তার জিদ্ না রাইখা ছোটকর্তার উপায় নাই।’

 পরেশ হাঁ করে নাগার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। একথাটা তো তার খেয়াল হয় নি!

 নাগা আবার বলে, ‘বড়কর্তারে খুশী রাখিস্, বড়কর্তা যতকাল আছেন তর ভাবনা নাই।’

 পরেশ তখন খুশী হয়ে চলে যায় আর রূপা এসে নাগার সামনে দাঁড়ায়। লজ্জায় রূপা চোখ নীচু করে রাখে কিন্তু ছেলেমানুষী আমোদের মুচকি হাসি তার মুখে লেগেই থাকে।