পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৩
মাঝির ছেলে

থেকে গালে নেমে আসতে দিল। কেউ দেখলে ভাববে বৃষ্টির জল, মা ও মেয়ে তাকে একটু দরদ করে গেছে বলেই এত বড় বুড়ো ছেলে কাঁদছে না।”

 আশ্বিনের গোড়ায় আবার সমুদ্রের ডাক এল।

 কিছুদিন পরে পূজা। যাদববাবুর বাড়ী প্রতি বছর পূজা হয়; এবারও ধীরে সুস্থে পূজার আয়োজন আরম্ভ হয়ে গেছে। এসময় যাদববাব লঞ্চ নিয়ে যাবেন শুনেই ছোটমা। আপত্তি করলেন।

 ‘তুমি গেলে সব দেখবে শুনবে কে?”

 “দাদা আছেন।”

 “উনি নতুন আইছেন, উনি কি জানেন? অখন তুমি যাঠিতে পারব না।” যাদববাবু ভরসা দিয়ে বললেন, “চার পোচ দিনের মধ্যে ফিরা আসুম।”

 ছোটমা দ্বিধাভরে বললেন, ‘আসবা তো ঠিক?”

 ‘আসুম।”

 নাগা বড় খুশী। তার মনে হল, ডেনিস যেন মুক্তির নিমন্ত্রণ পাঠিয়েছে। কতকাল সে একটা লম্বা পাড়ি দেয় নি! বৰ্ষা সমুদ্রের কোন পরিবর্তন করেছে কি না নিজের চোখে দেখে আসবার সাধটাও তার মিটবে

 রূপা বলে, ‘ফুর্তি দেখি যে খুব?”

 নাগা বলে, “সাগরে গেছস রূপা কোনদিন?”

 রূপা বলে, “কাম নাই আমার সাগরে গিয়া!”

 পষ্ণু একটু গম্ভীর হয়ে বলে, “তুফানের সময় পড়ছে।”

 নাগা বলে, “তুফান আমাগো করব কি?”

 পঞ্চর সঙ্গে নাগার খুব ভাব হয়েছে। পঞ্চই চেষ্টা করে চালচুলাহীন নাগার সঙ্গে রূপার বিয়ে দেওয়ার জন্য নকুলকে রাজী করেছে সদরের দোকান তুলে দিয়ে পঞ্চ এখন বাড়ীতে থাকে, দোকান নাকি ভাল চলছিল না। তাছাড়া, মাঝির ছেলের কি, দোকান করা পোষায়? যাদববাবুকে বলে নাগা তাকে লঞ্চে কাজ পাইয়ে দিয়েছে।

 ভিমন আপত্তি করেছিল। লঞ্চে আর লোক দরক্লার নেই, তাছাড়া