পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৪৮

চালান দেয়। ধীরে ধারে তার মাল বোঝাই নৌকা এক শহরের ঘাট থেকে আরেক শহরের ঘাটে গিয়ে পৌঁছায়,—দিনের পর দিন এসে চলে যায়, যাক, সময়ের কে হিসাব রাখে। কিছুদিন থেকে যাদববাবু নিতাই সাহাকে বুঝাবার চেষ্টা করছেন, অল্প সময়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মাল পাঠাতে পারলে কারবার কত বড় করে তোলা সম্ভব। রেলস্টীমার এরোপ্লেনের যুগে কি শামুকের গতিতে মাল চালান দিয়ে ব্যবসা করা চলে? নিতাই সাহা ভুঁড়িতে হাত বুলিয়ে আমতা আমতা করে যাদববাবুর সব কথাতেই সায় দিয়েছে, বলেছে, হ, যাদববাবুর সব কথাই ঠিক, মাল চালানের ভাল ব্যবস্থা না থাকলে ব্যবসার উন্নতি হয় না বটে—তবে কিনা,—মুশকিল এই যে লঞ্চের ভাড়া যে বড্ড বেশী, চালান, দিতেই যদি অত, খরচ হয়, লাভ থাকবে কি?

 ‘সময় বাঁচান লাভ না, নিতাই? এক চালানের সময়ে তিন চালান দিবা, লাভ বাড়বে না? শেষ পর্যন্ত গোয়ালন্দে তামাক পাতার একটি। চালান পাঠাতে যাদববাবুর লঞ্চটি ভাড়া করবে বলে নিতাই সাহা একরকম কথা দিয়ে ফেলেছে, আজ কথাটা পাকাপাকি হয়ে যেত। চাঁদ মাঝির জন্য ইন্ধেফসল নিয়ে আটখামারে ছুটতে হওয়ায় সময়মত নিতাই সাহার সঙ্গে যাদববাবু দেখা করতে পারেন নি। খালাসী পাঠিয়ে তাই নিতাই সাহাকে তিনি ডেকে পাঠিয়েছেন।

 লঞ্চ ভাড়া করানোর দরকার আর আগ্রহ যাদববাবুর বেশী, তিনি খালাসী পাঠিয়ে ডেকে পাঠিয়েছেন নিতাই সাহাকে। প্রথম থেকে নাগার মনটা খুতখুঁত করছিল। এই কি যাদববাবুর বুদ্ধি আর অভিজ্ঞতার পরিচয়?

 খালাসী ফিরে এল আধঘণ্টা পরে। কাল সকালে সময় পেলে নিতাই সাহা এসে দেখা করবে, যাদববাবু যেন কিছু মনে না করেন। কি মনে করলেন, যাদববাবু তিনিই জানেন, মুখ গম্ভীর করে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইলেন।

 'কর্তা-'

 ‘হ, নাগা জানি। আমার যাওনা উচিত ছিল।’