পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৫
মাঝির ছেলে

দিতে চায় কিন্তু ভিমনার কাছে ওসব চালাকি চলবে কেন? খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব খবর সে জেনে নেয়। পদ্মা থেকে শুরু করে যমুনা পার হয়ে ব্রহ্মপুত্র ধরে অগ্রসর হতে হবে, পথে এখানে ওখানে থেমে কাপড়ের ব্যবসায়ীদের দিয়ে যেতে হবে সিল্কের থান। তারপর যাত্রার শেষে এক জায়গায় নামিয়ে দিতে হবে চারটি কাঠের বাক্স।

 যাদববাবু আর ভিমনা মুখ চাওয়াচায়ি করে। ডেনিসের সিল্ক আর বন্দুকের বাক্স এসে গড়িয়েছে নিতাই সাহার হাতে। বে-আইনী মালের বিপজ্জনক কারবার যারা করে তাদের সংখ্যা কি এতই কম যে বিদেশ থেকে যে মাল আনাল আর সে মাল বিলি করার ভার যে নিল, দুজনেই দাঁড়িয়ে গেল তাদের চেনা লোক!

 কথা শেষ হতে হতে বেলা পড়ে এল। আম আর ঘরে তৈরী খাবারে পেট ভরিয়ে নিতাই বিদায় নিলে। যাওয়ার আগে কিছুমাত্র দ্বিধা না করে ভিমনাকে অনুরোধ জানিয়ে বলল, ‘আমারে পৌছাইয়া দিবা?’ ভিমনা বলল, ‘লঞ্চ চলবে না। এখন, ইস্টিম নাই।’ যাদববাবু তাকে একটি প্রশ্ন করলে,—‘আইচ্ছা, আপনি আমার কাছে আইসেন। ক্যান সা’মশায়?’ নিতাই হেসে বলল, ‘আপনে যখন এই কাম শুরু করছেন, বিশ্বাসী ভদ্রলোক আপনে, আপনার কাছে না আইলা যামু কই?’

 নিতাই চলে গেলে যাদববাবু বললেন, ‘এর মধ্যে ছাপমারা হইয়া গেছি ভিমনা।’

 ভিমনা একটু চুপ করে হঠাৎ বলল, ‘আপনে ইবার না গেলেন কর্তা, আমিই পারুম।’

 “তাই কি হয় ভিমনা? যাদববাবু একটু হাসলেন, “তবে নাগা এবার যাইবো না”।

 নাগা চমকে উঠল। ‘আমি যামু না? আমি না গেলে চলবে ক্যান কর্তা?’

 যাদববাবু শান্ত কণ্ঠে বললেন, ‘না নাগা, এই সব ব্যাপারে তরে আর নিমু না। আমি বুড়া হইছি, আমার কিছু হইবো না, ছেলে মানুষ তো তুই, তর মনটা ক্যান বিগড়াইয়া দিমু? একবার নেশা ধইরা গেলে