পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৪২

অসন্তোষের সীমা থাকে না। নাগা একটি কথাও না বলে খোজ নিতে যায় কোন নৌকা করমতলায় যাবে কি না। ভাড়া নিলে যেতে রাজী থাকে অনেক নৌকাই, কিন্তু নিজের গরজে করমতলায় যাবে এমন একটি নৌকার সন্ধানও সে পায় না। ফিরে এসে সে নৌকা খুলতে বলে আর জানায় যে সকালে তাদের আর যাদববাবুর জন্য আসতে হবে না। সে এখানেই থাকবে এবং যাদববাবুকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বলবে নৌকা কেন হাজির নেই।

 কণিকা জিজ্ঞাসা করে, ‘কাল ফিরে আসবি তো নাগা, কাকার সঙ্গে?’ নাগা উদাসভাবে, বলে, ‘দেখি কর্তা কি কন।’

 নৌকা ছেড়ে যায় আর নাগা ভাবে, এক কাপড়ে কিছুদিন আগে সে করমতলায় গিয়েছিল, এক কাপড়েই আবার আটখামারে ফিরে এসেছে। করমতলায় হয়তো আর তাকে ফিরে যেতে হবে না। ধীরে ধীরে গিয়ে সে জটির একপ্রান্তে বসে থাকে। স্টীমার আগেই ছেড়ে চলে গিয়েছে, জেটি নির্জন। মন খারাপ করে, নাগা নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে এবং পরিচিত রূপ সামনে মেলে ধরে আর জেটির গায়ে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ তুলে তার মন ভুলানোর চেষ্টায় নদী যেন বলতে থাকে, আমি আছি, এত ভাবনা কিসের? তখন সন্ধ্যা উতরে গিয়েছে, নদীর বুকে এখানে ওখানে দেখা দিয়েছে আলোর বিন্দু। দেখতে দেখতে পৃথিবী ছেড়ে যারা চলে গিয়েছে আকাশে তারা হয়ে ফুটে তারা চোখ মিটমিট করে ইশারা করছে আর পৃথিবীর জীবন্ত মানুষ সাড়া দেবার জন্য এই আলোর বিন্দুর তারাগুলি জ্বেলে দিয়েছে।

 চমকে উঠে মুখ ফিরিয়ে পিছনে যাদববাবুকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নাগা। আশ্চর্য হয়ে উঠে দাঁড়াল। তাদের সকলের চোখ এড়িয়ে যাদববাবু জাহাজ থেকে কখন নামলেন?

 ‘জাহাজে আসছেন তো কর্তা?’

 ‘হ, আমার নিজের জাহাজ।’

 ‘কুই জাহাজ?’

 ‘ঠিক জাহাজ না, স্টীম লঞ্চ। আয় তরে দেখাই।’

 নাগাকে সঙ্গে নিয়ে যাদববাবু জেটির খানিক তফাতে, যেদিকে তাদের