পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৩
মাঝির ছেলে

 'না, দেখি নাই।”

 প্রথমদিন পঞ্চ বলেছিল সদরে সে নাকি একটি ছোটখাট দোকান দিয়েছে। কিন্তু কোথায় দোকান কিসের দোকান জািনবার কৌতুহল নাগার হয় নি। এবার নকুলকে কি বলা যায় নাগা তাই ভাবছে, দরজার কাছে রূপাকে দেখা গেল। রূপার মুখখান হাসি-হাসি অথবা কাঁদ-কাঁদ পিছনের ডিবারির আলোতে কিছুই বুঝা গেল না। এদিকে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়বার জন্য নকুল ছটফট উসখুসি করছে, এতরাত্রে এখানে দাঁড়িয়ে থাকবার কোন ছুতাও তার নেই।

 তখন নাগার মনে জাগল এক বুদ্ধি—কুবুদ্ধিই বলা যায়।

 “আ কৃপাল, আসল কথাই ভুইলা গেছি। কর্তা তোমারে ডাকছেন— কর্তা আছেন। লঞ্চে।”

 “আমারে ডাকছেন? অখন?”

 “হা, চট কইরা যাও। মেজাজ ভাল না। কর্তার।’ নকুল আর কি করে, কোমরে ভাল করে কাপড় জড়িয়ে বলল, “নে, যাই’।

 নাগা বলল, “আমি বাড়ীত গিয়া ঘুমামু, দুই রাইত ঘুমাই নাই।” নকুল অগত্যা একাই নদীতীরে লঞ্চের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল। সারাদিন চিড়ে কুটে রূপার মা অঘোরে ঘুমোচ্ছিল, কমপক্ষে আধুঘণ্টা রূপার সঙ্গে কথা বলার। আর কোন বাধাই রইল না। প্রথমে রূপাই কথা বলল।

 “হইছে তো আক্কল? ঘুমাও গিয়া ঘরে-সাত তারিখ তাক ঘুমাইও *&न भज॥”

 “আমার দোষ কি?” ‘দোষ না তোমার? কইলাম। মতলব করতেছে লোকটা, চইলা গেলা কোন হিসাবে? দেৱী করলা ক্যান?

 হ, নাগা দোষ করেছে বটে, চেষ্টা করে দেখার বদলে স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সে কি ভাবতে পেরেছিল। পরেশ এর মধ্যে টাকা যোগাড় করে দিনক্ষণ সব ঠিক করে ফেলবে।