পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৬০

বাবা বারণ করে দিয়েছে, ভাল চাস তো পালা এখান থেকে। চাকর হয়ে তুই আমার সঙ্গে ইয়ার্কি দিস্‌!'

 নাগা তখন গেল নকুল মাঝির বাড়িতে। দাওয়ায় একটা ডিবরি জ্বলছে, রূপা উপুড় হয়ে পড়ে আছে আর তার মাথার কাছে বসে আছে তার মা। নাগার গলার আওয়াজে রূপা মুখ তুলে তাকাল। ইতিমধ্যেই কেঁদে কেঁদে সে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।

 নাগা ডাকল, 'রূপা?'

 রূপা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল, 'আমার রামলক্ষ্মণরে নিয়া গেছে নাগাদাদা, আমার রামলক্ষ্মণরে আইনা দাও।'

 রূপার মা বলল, 'দেখছস নাগা মাইয়ার কাণ্ড? মাইয়ার য্যান পোলা কাইড়া নিছে!’ বলে রূপার মা রান্না ঘরে চলে গেল। মেয়েকে সামলাতে গিয়ে এতক্ষণ রান্নার দিকে সে তাকাতেই পারে নি।

 দু’টো বেজীর জন্য মানুষের এত কষ্ট হয়? নাগা অভিভূত হয়ে বসে থাকে। এত বড় অন্যায়টা যাদববাবু কি করে করলে? ভাইঝির শখ মেটাবার জন্য আরেকটি মেয়েকে এমন করে কাঁদালেন? নাগা জানে, রূপার মনে কষ্ট হবে জানলে যাদববাবু কখনো তার পোষা বেজী দু’টি নিতেন না, তবু যাদববাবুর ওপর তার বড় রাগ হয়। মানুষের মনে কিসে ব্যথা লাগে, কিসে লাগে না সেটাও তো হিসাব করে চলা উচিত মানুষের?

 'রূপা শোন, উইঠা বয়। ক’দিন বাদে তাঁর রামলক্ষ্মণরে আইনা দিতে পারুম সন্দ করি।'

 রূপা তৎক্ষণাৎ উঠে বসল। ‘না, আইজ আইনা দেও।'

 আজ আনা সম্ভব নয়, কণিকা মরে গেলেও আজ রামলক্ষ্মণকে হাতছাড়া করবে না। কণিকার স্বভাব নাগা যতটুকু বুঝেছে তাতে একটু আশা করা যায় যে কদিন পরে বেজী পোষার শখ হয়তো তার মিটে যাবে, তখন চেষ্টা করলে রামলক্ষ্মণকে ফিরিয়ে আনা গেলেও যেতে পারে।

 'আইজ না, কদিন বাদে আনুম। আইজ তুই এইটা নে।' আঙ্গুল থেকে যাদববাবুর দেওয়া আংটি খুলে সে রূপার দিকে বাড়িয়ে দিল।