পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৯৮

কথাগুলি নাগার কানে পোছবার আগেই বাতাস গর্জাতে গর্জাতে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। বন্দরের আলো দেখে বোধ হয় পঞ্চুর ভরসা হল যে প্রাণটা আজ আর তার সমুদ্রে রেখে যেতে হবে না। ডেকের মাঝখানে নীচে নামবার সিঁড়ির মুখের কাছে লোহার রড জড়িয়ে বসে থাকার বদলে সে টলতে টলতে রেলিংএর ধারে নাগার কাছে এসে দাঁড়াল। নাগা ভাবল, এভাবে রেলিং ঘেষে দাড়ানো যে বিপজ্জনক এতক্ষণে সেটা খেয়াল হওয়ায় পঞ্চু বুঝি তাকে সরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে। বন্দরের একেবারে কাছে এসে পরের বিপদ সম্বন্ধে সচেতন হওয়াটা পঞ্চুর পক্ষে স্বাভাবিক,— এতক্ষণ নিজের ভাবনাই বেচারী ভাবছিল, করবে কি।

 কিন্তু পঞ্চু তাকে কিছু বলল না, এক হাতে রেলিং ধরে দাড়িয়ে আরেক হাত উঁচুতে তুলে প্রকাণ্ড একটা টর্চের আলো একবার জালিয়ে আবার নিভিয়ে দিতে লাগল।

 তখন পঞ্চুর হাতে টর্চে যেমন ঝলক মেরে আলো জেলে উঠেছিল তেমনিভাবে নাগার মনে পড়ে একটি দৃশ্য-সদরের জেটির এক কোণে বসে পঞ্চু হাত তুলে রুমাল নাড়ছে।

 'তুমি পুলিশ ডাকছ!'—নাগা চীৎকার করে উঠল।

 পরেশ তার কানের কাছে মুখ এনে চেঁচিয়ে বলল, ‘তর ভয় নাই নাগা। আমি কইয়া দিমু—”

 চোখের পলকে তার হাত থেকে টর্চটি ছিনিয়ে নিয়ে নাগা একমুহূর্ত হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সঙ্গেত করা হয়ে গিয়েছে, জলকন্যা বন্দরের কাছে এগিয়ে যাওয়া মাত্র পুলিশ ছেকে ধরবে। এগিয়ে যাওয়ার জন্যও হয়তো তারা অপেক্ষা করবে না, লঞ্চ নিয়ে পুলিশ হয়তো তৈরী হয়েই ছিল, পঞ্চুর সঙ্কেত পেয়ে তারাই হয়তো এগিয়ে এসে জলকন্যাকে পাকড়াও করার জন্য রওনা হয়ে গিয়েছে। কি করা যায় এখান?

 পঞ্চকে তুলে সমুদ্রে ছুড়ে দেওয়া যায়।

 কিন্তু তার চেয়ে আগে ভিমনা আর যাদববাবুকে খবরটা জানানই বোধ হয় উচিত। হামাগুড়ি দিয়ে, কেবিনের দেওয়াল ধরে নাগা যত