কর্ম্মফল/সপ্তম পরিচ্ছেদ

উইকিসংকলন থেকে


সপ্তম পরিচ্ছেদ।


 শশধর। দেখ মন্মথ সতীশের উপরে তুমি বড় কড়া ব্যবহার আরম্ভ করেছ এখন বয়স হয়েছে এখন ওর প্রতি অতটা শাসন ভাল নয়!

 বিধু। বল ত রায় মশায়! আমি ত ওঁকে কিছুতেই বুঝিয়ে পারলেম না!

 মন্মথ। দুটো অপবাদ এক মুহূর্ত্তেই! একজন বল্লেন নির্দ্দয় আর একজন বল্লেন নির্ব্বোধ! যাঁর কাছে হতবুদ্ধি হয়ে আছি তিনি যা বলেন সহ্য করতে রাজি আছি—তাঁর ভগ্নী যাহা বলবেন তার উপরেও কথা কব না কিন্তু তাই বলে তাঁর ভগ্নীপতি পর্য্যন্ত সহিষ্ণুতা চলবে না! আমার ব্যবহারটা কি রকম কড়া শুনি!

 শশধর। বেচার সতীশের একটু কাপড়ের সখ আছে, ও পাঁচ জায়গায় মিশতে আরম্ভ করেছে ওকে তুমি চাঁদনীর—  মন্মথ। আমি ত চাঁদনীর কাপড় পরতে বলিনে। ফিরিঙ্গি পোষাক আমার দু চক্ষের বিষ। ধুতি চাদর চাপকন চোগা পড়ুক কখনো লজ্জা পেতে হবে না।

 শশধর। দেখ মন্মথ সতীশ যদি এ বয়সে সখ মিটিয়ে না নিতে পারে তবে বুড়া বয়সে খামকা কি করে বসবে সে আরো বদ্‌ দেখতে হবে। আর ভেবে দেখ যেটাকে আমরা শিশুকাল হতেই সভ্যতা বলে শিখচি তার আক্রমণ ঠেকাবে কি করে?

 মন্মথ। যিনি সভ্য হবেন তিনি সভ্যতার মালমসলা নিজের খরচেই জোগাবেন। যে দিক হতে তোমার সভ্যতা আসছে টাকাটা সে দিক হতে আসছে না, বরং এখান হতে সেই দিকেই যাচ্ছে।

 বিধু। রায় মশায়, পেরে উঠবে না—দেশের কথা উঠে পড়লে ওঁকে থামানো যায় না।

 শশধর। ভাই মন্মথ, ও সব কথা আমি। বুঝি। কিন্তু ছেলেদের আবদারও ত এড়াতে পারিনে। সতীশ ভাদুড়ি সাহেবদের সঙ্গে যখন মেশামেশি কর্‌চে তখন উপযুক্ত কাপড় না থাকলে ও বেচারার বড় মুস্কিল। আমি রাঙ্কিনের বাড়ীতে ওর জন্য–

ভৃত্যের প্রবেশ।

 ভৃত্য। সাহেব বাড়ী হতে এই কাপড় এয়েছে।

 মন্মথ। নিয়ে যা কাপড়, নিয়ে যা! এখনি নিয়ে যা! (বিধুর প্রতি) দেখ সতীশকে যদি আমি এ কাপড় পরতে দেখি তবে তাহাকে বাড়ীতে থাকতে দেব না ‘মেসে’ পাঠিয়ে দেব সেখানে সে আপন ইচ্ছামত চলতে পারবে! (দ্রুত প্রস্থান)

 শশধর। অবাক কাণ্ড!

 বিধু। (সরোদনে) রায় মশায়, তোমাকে কি বলব আমার বেঁচে সুখ নেই। নিজের ছেলের উপর বাপের এমন ব্যবহার কেউ কোথাও দেখেচে!

 শশধর। আমার প্রতি ব্যবহারটা ও ত ঠিক ভাল হল না। বোধ হয় মন্মথর হজমের গোল হয়েচে। আমার পরামর্শ শোন, তুমি ওকে রোজ সেই একই ডাল ভাত খাইয়ো না। ও যতই বলুক না কেন মাঝে মাঝে মসলাওয়ালা রান্না না হলে মুখে রোচে না, হজমও হয় না। কিছুদিন ওকে ভাল করে খাওয়াও দেখি তার পরে তুমি যা বলবে ও তাই শুনবে। এ সম্বন্ধে তোমার দিদি তোমার চেয়ে ভাল বোঝেন। (প্রস্থান, বিধুর ক্রন্দন)।

 বিধবা জা। (ঘরে প্রবেশ করিয়া আত্মগত)। কখনো কান্না কখনো হাসি —কত রকম যে সোহাগ তার ঠিক নেই—বেশ আছে (দীর্ঘ নিশ্বাস)। ও মেজ বৌ, গোসাঘরে বসেছিসো! ঠাকুরপোকে ডেকে, দিই, মানভঞ্জনের পালা হ’য়ে যাক!