কর্ম্মফল/ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ।
মিষ্টার ভাদুড়ির বাড়ীতে টেনিস্ক্ষেত্র।
নলিনী। ও কি সতীশ, পালাও কোথায়?
সতীশ। তোমাদের এখানে টেনিসপার্টি জান্তেম না আমি টেনিসসুট পরে আসিনি!
নলিনী। সকল গরুর ত এক রঙের চামড়া হয় না। তোমার না হয় ওরিজিন্যাল বলেই নাম রটবে। আচ্ছা আমি তোমার সুবিধা করে দিচ্চি। মিষ্টার নন্দী আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে!
নন্দী। অনুরোধ কেন, হুকুম বলুন না— আমি আপনারি সেবার্থে!
নলিনী। যদি একবারে অসাধ্য বোধ না। করেন ত আজকের মত আপনার সতীশকে মাপ করবেন—ইনি আজ টেনিস্সুট পরে আসেন নি। এত বড় শোচনীয় দুর্ঘটনা! নন্দী। আপনি ওকালতি করলে খুন, জাল, ঘর জ্বালানও মাপ করতে পারি। টেনিস্সুট না পরে এলে যদি আপনার এত দয়া হয় তবে আমার এই টেনিসসুটটা মিষ্টার সতীশকে দান করে তাঁর এই—এটাকে কি বলি! তোমার এটা কি সুট সতীশ?—খিচুড়ী সুটই বলা যাক—তা আমি সতীশের এই খিচুড়ী সুটটা পরে রোজ এখানে আসব। আমার দিকে যদি স্বর্গের সমস্ত সূর্য্য-চন্দ্রতারা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তবু লজ্জা করব না। সতীশ এ কাপড়টা দান করতে যদি তোমার আপত্তি থাকে তবে তোমার দজ্জির ঠিকানাটা আমাকে দিয়ো। ফ্যাশনেবল ছাটের চেয়ে মিস ভাদুড়ীর দয়া অনেক মূল্যবান।
নলিনী। শোন, শোন সতীশ, শুনে রাখ। কেবল কাপড়ের ছাঁট নয় মিষ্ট কথার ছাঁদও তুমি মিষ্টার নন্দীর কাছে শিখতে পার। এমন আদর্শ আর পাবে না! বিলাতে ইনি ডিউক্ ডাচেস্ ছাড়া আর কার ও সঙ্গে কথাও কন নাই। মিষ্টার নন্দী আপনাদের সময় বিলাতে বাঙালী ছাত্র কে কে ছিল? নন্দী। আমি বাঙালীদের সঙ্গে সেখানে মিশিনি।
নলিনী। শুনচ সতীশ! রীতিমত সভ্য হতে গেলে কত সাবধানে থাকতে হয়! তুমি বোধ হয় চেষ্টা করলে পারবে। টেনিস্সুট সম্বন্ধে তোমার যে রকম সুক্ষ্ণ ধর্ম্মজ্ঞান তাতে আশা হয়। (অন্যত্র গমন)
সতীশ। (দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া) নেলিকে আজ পর্য্যন্ত বুঝতেই পারলেম না। আমাকে দেখে ও বোধ হয় মনে মনে হাসে। আমার ও মুস্কিল হয়েছে আমি কিছুতে এখানে এসে সুস্থ মনে থাকতে পারি নে—কেবলি মনে হয় আমার টাইটা বুঝি কলারের উপরে উঠে গেছে, আমার ট্রাউজারে হাঁটুর কাছটায় হয় ত কুঁচ্কে আছে। নন্দীর মত কবে আমিও বেশ ঐ রকম অনায়াসে ফুর্ত্তির সঙ্গে—
নলিনী। (পুনরায় আসিয়া) কি সতীশ এখনও যে তোমার মনের খেদ মিট্ল না! টেনিস্ কোর্ত্তার শোকে তোমার হৃদয়টা যে বিদীর্ণ হয়ে গেল! হায়, কোর্ত্তাহারা হৃদয়ের সান্ত্বনা জগতে কোথায় আছে—দর্জ্জির বাড়ী ছাড়া! সতীশ। আমার হৃদয়টার খবর যদি রাখতে তবে এমন কথা আর বলতে না নেলি!
নলিনী। (করতালি দিয়া) বাহবা! মিষ্টার নন্দীর দৃষ্টান্তে মিষ্ট কথার আমদানি এখনি সুরু হয়েছে! প্রশ্রয় পেলে অত্যন্ত উন্নতি হবে ভরসা হচ্ছে! এস একটু কেক খেয়ে যাবে, মিষ্ট কথার পুরস্কার মিষ্টান্ন।
সতীশ। না আজ আর খাব না, আমার শরীরটা—
নলিনী। সতীশ আমার কথা শোন—টেনিস্ কোর্ত্তার খেদে শরীর নষ্ট কোরো না-খাওয়া দাওয়া একেবারে ছাড়া ভাল নয়। কোর্ত্তা জিনিসটা জগতের মধ্যে সেরা জিনিস সন্দেহ নেই কিন্তু এই তুচ্ছ শরীরটা না হলে সেটা বুলিয়ে বেড়াবার সুবিধা হয় না!