কর্ম্মফল/দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

উইকিসংকলন থেকে


দ্বাদশ পরিচ্ছেদ।


 সুকুমারী। সতীশ!

 সতীশ। কি মাসীমা!

 সুকুমারী। কাল যে তোমাকে খোকার কাপড় কিনে আনবার জন্য এত করে বল্লেম অপমান বোধ হল বুঝি!

 সতীশ। অপমান কিসের মাসিমা! কাল ভাদুড়ি সাহেবের ওখানে আমার নিমন্ত্রণ ছিল তাই—

 সুকুমারী। ভাদুড়ি সাহেবের ওখানে তোমার এত ঘন ঘন যাতায়াতের দরকার কি তা ত ভেবে পাইনে। তার সাহেব মানুষ, তোমার মত অবস্থার লোকের কি তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা সাজে? আমিত শুনলেম তোমাকে তারা আজকাল পোছে না, তবু বুঝি ঐ রঙীন টাইয়ের উপর টাইরিং, পরে বিলাতী কার্ত্তিক সেজে তাদের ওঁখানে আনাগোনা করতেই হবে! তোমার কি একটুও সম্মানবোধ নেই! তাই যদি থাকবে তবে কি কাজকর্ম্মের কোন চেষ্টা না করে এখানে এমন করে পড়ে থাকতে? তার উপরে আবার একটা কাজ করতে বললে মনে মনে রাগ করা হয় পাছে ওঁকে কেউ বাড়ির সরকার মনে করে ভুল করে! কিন্তু সরকারও ত ভাল—সে খেটে উপার্জ্জন করে খায়!

 সতীশ। মাসীমা আমিও হয়ত তা পারতেম, কিন্তু তুমিইত-

 সুকুমারী। তাই বটে! জানি, শেষকালে আমারি দোষ হবে! এখন বুঝচি তোমার বাপ তোমাকে ঠিক চিন্‌তেন তাই তোমাকে এমন করে শাসনে রেখেছিলেন। আমি আরো ছেলেমানুষ বলে দয়া করে তোমাকে ঘরে স্থান দিলেম, জেল থেকে বাঁচালেম শেষকালে আমারি যত দোষ হল। একেই বলে কৃতজ্ঞতা! আচ্ছা আমারি না হয় দোষ হল, তবু যে ক’দিন এখানে আমাদের অন্ন খাচ্চ দরকার মত দুটো কাজই না হয় করে দিলে। এমন কি কেউ করে না! এতে কি অত্যন্ত অপমান বোধ হয়!  সতীশ। কিছু না, কিছু না, কি করতে হবে বল, আমি এখনি করচি।

 সুকুমারী। খোকার জন্যে সাড়ে সাত গজ। রেনবো সিল্ক্‌ চাই—আর একটা সেলার সুট্‌—। (সতীশের প্রস্থানোদ্যম) শোন শোন ওর মাপটা নিয়ে যেয়ো জুতো চাই! (সতীশ প্রস্থানোন্মুখ) অত ব্যস্ত হচ্চ কেন—সবগুলো ভাল করে শুনেই যাও! আজও বুঝি ভাদুড়ি সাহেবের রুটি বিস্কুট খেতে যাবার জন্য প্রাণ ছট্‌ ফট্‌ করচে! খোকার জন্যে ষ্ট্র হ্যাট্‌ এনো—আর তার রুমালও এক ডজন চাই! (সতীশের প্রস্থান। তাহাকে পুনরায় ডাকিয়া) শোন সতীশ আর একটা কথা আছে! শুনলাম তোমার মেসোর কাছ হতে তুমি নূতন সুট্‌ কেনবার জন্য আমাকে না বলে টাকা চেয়ে নিয়েছ। যখন নিজের সামর্থ হবে তখন যত খুসি সাহেবিয়ানা করো, কিন্তু পরের পয়সায় ভাদুড়ি সাহেবদের তাক্‌ লাগিয়ে দেবার জন্য মেসোকে ফতুর করে দিয়ো না! সে টাকাটা আমাকে ফেরৎ দিয়ো! আজকাল আমাদের বড় টানাটানির সময়!  সতীশ। আচ্ছা এনে দিচ্চি।

 সুকুমারী। এখন তুমি দোকানে যাও, সেই টাকা দিয়ে কিনে বাকিটা ফেরৎ দিয়ো। একটা হিসাব রাখতে ভুলো না যেন (সতীশের প্রস্থানোদ্যম) শোন সতীশ—এই ক’টা জিনিষ কিন্‌তে আবার যেন আড়াই টাকা গাড়িভাড়া লাগিয়ে বসো না! ঐ জন্যে তোমাকে কিছু আন্‌তে বলতে ভয় করে। দু’পা হেঁটে চলতে হলেই অমনি তোমার মাথায় মাথায় ভাবনা পড়ে-পুরুষ মানুষ এত বাবু হলেত চলেনা! তোমার, বাবা রোজ সকালে নিজে হেঁটে গিয়ে নতুন বাজার হতে কই মাছ কিনে আন্‌তেন—মনে আছেত? মুটেকেও তিনি এক পয়সা দেন নাই!

 সতীশ। তোমার উপদেশ মনে থাকবে— আমিও দেব না! আজ হতে তোমার এখানে মুটে ভাড়া বেহারার মাইনে যত অল্প লাগে সে দিকে আমার সর্ব্বদাই দৃষ্টি থাকবে।