কর্ম্মফল/একাদশ পরিচ্ছেদ
একাদশ পরিচ্ছেদ।
সতীশ। মা এখেনে আমি যে কত সুখে আছি সে ত আমার কাপড়চোপড় দেখেই বুঝতে পার। কিন্তু মেসোমশায় যতক্ষণ না আমাকে পোষ্যপুত্র গ্রহণ করেন ততক্ষণ নিশ্চিন্ত হতে পারছিনে। তুমি যে মাসহরা পাও আমার ত তাতে কোন সাহায্য হবে না। অনেক দিন হতে নেব-নেব করেও আমাকে পোষ্যপুত্র নিচ্চেন না—বোধ হয় ওঁদের মনে মনে সন্তানলাভের আশা এখনো আছে।
বিধু। (হতাশভাবে) সে আশা সফল হয় বা সতীশ!
সতীশ। অ্যাঁ! বল কি মা!
বিধু। লক্ষণ দেখে ত তাই বোধ হয়!
সতীশ। লক্ষণ অমন অনেক সময় ভুলও ত হয়! বিধু। না ভুল নয় সতীশ এবার তোর ভাই হবে!
সতীশ। কি যে বল মা, তার ঠিক নেই— ভাই হবেই কে বল্লে! বোন্ হতে পারে না বুঝি!
বিধু। দিদির চেহারা যেরকম হয়ে গেছে নিশ্চয় তাঁর মেয়ে হবে না, ছেলেই হবে। তা ছাড়া ছেলেই হোক্ মেয়েই হোক্ আমাদের পক্ষে সমানই!
সতীশ। এত বয়সের প্রথম ছেলে, ইতিমধ্যে অনেক, বিঘ্ন ঘটতে পারে!
বিধু। সতীশ তুই চাক্রীর চেষ্টা কর!
সতীশ। অসম্ভব! পাস করতে পারিনি। তা ছাড়া চাকরী করবার অভ্যাস আমার একবারে গেছে। কিন্তু যাই বল মা, এ ভারি অন্যায়! আমি ত এতদিনে বাবার সম্পত্তি পেতেম তার থেকে বঞ্চিত হলেম, তার পরে যদি আবার—
বিধু। অন্যায় নয় ত কি সতীশ! এ দিকে। তোকে ঘরে এনেছেন, ওদিকে আবার ডাক্তার ডাকিয়ে ওষুধ ও খাওয়া চলচে। নিজের বোনপোর সঙ্গে এ কি রকম ব্যবহার! শেষকালে দয়াল ডাক্তারের ওষুধই ত খেটে গেল! অস্থির হোস্নে সতীশ! একমনে ভগবান্কে ডাক্—তাঁর কাছে কোনো ডাক্তারই লাগে না। তিনি যদি—
সতীশ। আহা তিনি যদি এখনো—! এখনো সময় আছে! মা এঁদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত কিন্তু যে রকম অন্যায় হল সে ভাব রক্ষা করা শক্ত হয়ে উঠেছে! ঈশ্বরের কাছে এঁদের একটা দুর্ঘটনা না প্রার্থনা করে থাক্তে পারচিনে— তিনি দয়া করে যেন—
বিধু আহা তাই হোক্ নইলে তোর উপায় কি হবে সতীশ আমি তাই ভাবি। হে ভগবান্ তুমি যেন—
সতীশ। এ যদি না হয় তবে ঈশ্বরকে আমি আর মান্বনা! কাগজে নাস্তিকতা প্রচার করব!
বিধু। আরে চুপ্ চুপ এখন অমন কথা মুখে আনতে নেই। তিনি দয়াময়, তাঁর দয়া হলে কি না ঘটতে পারে। সতীশ তুই আজ এত ফিট্ ফাট্ সাজ করে কোথায় চলেছিস্? উঁচু কলার পরে মাথা যে আকাশে গিয়ে ঠেক্ল! ঘাড় হেঁট করবি কি করে? সতীশ। এমনি করে কলারের জোরে যত দিন মাথা তুলে চল্তে পারি চলব তার পরে ঘাড় হেঁট করবার দিন যখন আসবে তখন এগুলো ফেলে দিলেই চলবে। বিশেষ কাজ আছে মা চল্লেম কথাবার্ত্তা পরে হবে। (প্রস্থান)
বিধু। কাজ কোথায় আছে তা জানি! মাগো, ছেলের আর তর্ সয়না! এ বিবাহটা ঘটবেই! আমি জানি আমার সতীশের অদৃষ্ট খারাপ নয়, প্রথমে বিঘ্ন যতই ঘটুক্ শেষ কালটায় ওর ভাল হয়ই এ আমি বরাবর দেখে আসচি! না হবেইবা কেন! আমি ত জ্ঞাতসারে কোন পাপ করিনি—আমি ত সতী স্ত্রী ছিলাম, সেইজন্যে আমার খুব বিশ্বাস হচ্চে দিদির এবারে—!