কর্ম্মফল/চতুর্দশ পরিচ্ছেদ
চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ।
সতীশ। আমি তোমার কাছে বিদায় নিতে এসেচি নেলি!
নলিনী। কেন কোথায় যাবে!
সতীশ। জাহান্নমে।
নলিনী। সে জায়গায় যাবার জন্য কি বিদায় নেবার দরকার হয়? যে লোক সন্ধান জানে সে ত ঘরে বসেই সেখানে যেতে পারে! আজ তোমার মেজাজটা এমন কেন? কলারটা বুঝি ঠিক হালফেশানের হয়নি!
সতীশ। তুমি কি মনে কর আমি কেবল কলারের কথাই দিনরাত্রি চিন্তা করি!
নলিনী। তাইত মনে হয়!সেইজন্যই ত হঠাৎ তোমাকে অত্যন্ত চিন্তাশীলের মত দেখায়!
সতীশ। ঠাট্টা করে না নেলি তুমি যদি আজ। আমার হৃদয়টা দেখতে পেতে— নলিনী। তা হলে ডুমুরের ফুল এবং সাপের পাঁচপাও দেখতে পেতাম!
সতীশ। আবার ঠাট্টা! তুমি বড় নিষ্ঠুর! সত্যই বলচি নেলি আজ বিদায় নিতে এসেচি।
নলিনী। দোকানে যেতে হবে?
সতীশ। মিনতি করচি নেলি ঠাট্টা করে আমাকে দগ্ধ করো না। আজ আমি চিরদিনের মত বিদায় নেব।
নলিনী। কেন, হঠাৎ সেজন্য তোমার এত বেশী আগ্রহ কেন?
সতীশ। সত্য কথা বলি, আমি যে কত দরিদ্র তা তুমি জাননা!
নলিনী। সেজন্য তোমার ভয় কিসের। আমি ত তোমার কাছে টাকা ধার চাইনি।
সতীশ। তোমার সঙ্গে আমার বিবাহের সম্বন্ধ হয়েছিল—
নলিনী। তাই পালাবে? বিবাহ না হতেই হৃৎকম্প!
সতীশ। আমার অবস্থা জান্তে পেরে মিষ্টার ভাদুড়ি আমাদের সম্বন্ধ ভেঙে দিলেন! নলিনী। আমনি সেই অপমানেই কি নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে হবে! এত বড় অভিমানী লোকের কা্রো সঙ্গে কোন সম্বন্ধ রাখা শোভা পায় না। সাধে আমি তোমার মুখে ভালবাসার কথা শুনলেই ঠাট্টা করে উড়িয়ে দি!
সতীশ। নেলি, তবে কি এখনো আমাকে আশা রাখতে বল!
নলিনী। দোহাই সতীশ, অমন নভেলি ছাঁদে কথা বানিয়ে বলো না, আমার হাসি পায়। আমি তোমাকে আশা রাখতে বলব কেন? আশা যে রাখে সে নিজের গরজেই রাখে, লোকের পরামর্শ শুনে রাখে না!
সতীশ। সে ত ঠিক কথা! আমি জানতে চাই তুমি দারিদ্র্যকে ঘৃণা কর কি না!
নলিনী। খুব করি যদি সে দারিদ্র্য মিথ্যার দ্বারা নিজেকে ঢাক্তে চেষ্টা করে!
সতীশ। নেলি, তুমি কি কখনো তোমার চিরকালের অভ্যস্ত আরাম ছেড়ে গরীবের ঘরের লক্ষ্মী হতে পারবে! নলিনী। নভেলে যে রকম ব্যারামের কথা পড়া যায় সেটা তেমন করে চেপে ধরলে আরাম আপনি ঘরছাড়া হয়।
সতীশ। সে ব্যারামের কোন লক্ষণ কি তোমার-
নলিনী। সতীশ তুমি কখনো কোন পরীক্ষাতেই উত্তীর্ণ হতে পারলে না! স্বয়ং নন্দীসাহেবও বোধ হয় অমন প্রশ্ন তুলতেন না। তোমাদের একচুলও প্রশ্রয় দেওয়া চলে না!
সতীশ। তোমাকে আমি আজও চিনতে পারলেম না নেলি!
নলিনী। চিনবে কেমন করে? আমি ত তোমার হাল ফেশানের টাই নই কলার নই— দিনরাত যা নিয়ে ভাব তাই তুমি চেন!
সতীশ। আমি হাত জোড় করে বলচি নেলি তুমি আজ আমাকে এমন কথা বলো না! আমি যে কি নিয়ে ভাবি তা তুমি নিশ্চয় জান-
নলিনী। তোমার সম্বন্ধে আমার অন্তর্দৃষ্টি যে এত প্রখর তাহ এতটা নিঃসংশয়ে স্থির করে না। ঐ বাবা আস্চেন। আমাকে এখানে দেখলে তিনি অনর্থক বিরক্ত হবেন আমি যাই! (প্রস্থান)
সতীশ। মিষ্টার ভাদুড়ি আমি বিদায় নিতে এসেচি।
ভাদুড়ি। আচ্ছা, তবে আজ—
সতীশ। যাবার আগে একটা কথা আছে।
ভাদুড়ি। কিন্তু সময়ত নেই আমি এখন বেড়াতে বের হব!
সতীশ। কিছুক্ষণের জন্য কি সঙ্গে যেতে পারি?
ভাদুড়ি। তুমি যে পার তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু আমি পার্ব না। সম্প্রতি আমি সঙ্গীর অভাবে তত অধিক ব্যাকুল হয়ে পড়িনি!