শিশু ভোলানাথ/বাউল

উইকিসংকলন থেকে

বাউল

দূরে অশত্থতলায়
পুঁতির কণ্ঠীখানি গলায়
বাউল, দাঁড়িয়ে কেন আছ?
সামনে আঙিনাতে
তোমার একতারাটি হাতে
তুমি সুর লাগিয়ে নাচো।
পথে করতে খেলা
আমার কখন হল বেলা,
আমায় শাস্তি দিল তাই।
ইচ্ছে হোথায় নাবি,
কিন্তু ঘরে বন্ধ চাবি,
আমার বেরুতে পথ নাই।
বাড়ি ফেরার তরে
তোমায় কেউ না তাড়া করে,
তোমার নাই কোনো পাঠশালা।
সমস্ত দিন কাটে
তোমার পথে ঘাটে মাঠে,
তোমার ঘরেতে নেই তালা।

তাই তো তোমার নাচে
আমার প্রাণ যেন ভাই, বাঁচে—
আমার মন যেন পায় ছুটি।
ওগো, তোমার নাচে
যেন ঢেউয়ের দোলা আছে,
ঝড়ে গাছের লুটোপুটি।
অনেক দূরের দেশ
আমার চোখে লাগায় রেশ
যখন তোমায় দেখি পথে।
দেখতে যে পায় মন
যেন নাম-না-জানা বন
কোন্ পথহারা পর্বতে।
হঠাৎ মনে লাগে
যেন অনেক দিনের আগে
আমি অম্‌নি ছিলেম ছাড়া।
সেদিন গেল ছেড়ে,
আমার পথ নিল কে কেড়ে,
আমার হারাল একতারা।
কে নিল গো টেনে
আমায় পাঠশালাতে এনে,
আমার এল গুরুমশায়।

মন সদা বার চলে
যত ঘরছাড়াদের দলে
তারে ঘরে কেন বসায়?
কও তো আমায় ভাই—
তোমার গুরুমশায় নাই?
আমি যখন দেখি ভেবে
বুঝতে পারি খাঁটি,
তোমার বুকের একতারাটি
তোমায় ওই তো পড়া দেবে!
তোমার কানে কানে
ওরই গুন্‌গুনানি গানে
তোমায় কোন্ কথা যে কয়!
সব কি তুমি বোঝ?
তারই মানে যেন খোঁজ
কেবল ফিরে ভুবনময়।
ওরই কাছে বুঝি
আছে তোমার নাচের পুঁজি,
তোমার খ্যাপা পায়ের ছুটি?
ওরই সুরের বোলে
তোমার গলার মালা দোলে,
তোমার দোলে মাথার ঝুঁটি।

মন যে আমার পালায়
তোমার একতারা-পাঠশালায়—
আমায় ভুলিয়ে দিতে পারো?
নেবে আমায় সাথে?
এ-সব পণ্ডিতেরই হাতে
আমায় কেন সবাই মারো?
ভুলিয়ে দিয়ে পড়া
আমায় শেখাও সুরে-গড়া
তোমার তালা-ভাঙার পাঠ।
আর কিছু না চাই—
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
দূরে কেন আছ?
দ্বারের আগল ধ’রে নাচো
বাউল, আমারই এইখানে।
সমস্ত দিন ধ’রে
যেন মাতন ওঠে ভ'রে
তোমার ভাঙন-লাগা গানে।