পাতা:ঐতিহাসিক চিত্র (প্রথম বর্ষ) - নিখিলনাথ রায়.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঐতিহাসিক চিত্র।

ইহাই উচ্চতর চিহ্ন, ইহার ঊর্দ্ধে কাহারও দৃষ্টি যায় না; তৎপর বেদান্তের অপূর্ব্ব শ্রীসম্পন্ন তত্ত্বরাশি, মানবজাতি তাহা ঋষিগণের শ্রেষ্ঠতম দান বলিয়া অবনত মস্তকে গ্রহণ করিতেছে—এইরূপে ভারতীয় উন্নতির স্তর—সাহিত্যে, দর্শনে ও ধর্ম্মশাস্ত্রে আকারিত হইয়া রহিয়াছে, আমরা উত্তরাধিকারসত্বে তাহা হস্তগত করিয়াছি। কিন্তু একজন বিদেশীয় লোকও ত সেই গ্রন্থগুলি পাঠ করিয়া তাঁহার নিজস্ব করিয়া লইতে পারেন, আমাদের সঙ্গে তাঁহার কি ভিন্নতা রহিল? প্রভেদ একটা বিশেষরূপে বিছমান আছে—আমাদের পূর্ব্বপুরুষগণের চিন্তা আমাদের অস্থিমজ্জার ভিতর রহিয়াছে। সেই প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থাবলী পাঠে আমাদের চিন্তার যেরূপ উন্মেষ করিবে—আমাদিগের জাতীয় উন্নতির যেরূপ বিকাশ করিবে, অন্যজাতির পক্ষে তাহা অসম্ভব,—প্রত্যেক জাতিরই কোন না কোনরূপ বিশেষত্ব আছে,—সেই বিশেষত্বটুকু তাঁহাদের সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়,—আমাদের উন্নতিকল্পে ভিন্ন দেশীয় ইতিহাস জানা আবশ্যক, কিন্তু জাতীয় ইতিহাস জানা অপরিহার্য্য,—জাতীয় ইতিহাস আমাদের ভিত্তি গড়িয়া দিবে, নতুবা আমাদের উন্নতির গৃহপ্রতিষ্ঠা অসম্ভব। আমরা কি—এই জ্ঞানটুকু জাতীয় ইতিহাস হইতে সংগ্রহ করিয়া, সেই উপাদান দ্বারা ভাবী ইতিহাস গড়িয়া তুলিতে হইবে। বিদেশী মাল মসলা হইতে সহায়তা লইব, কিন্তু ভিত্তির উপাদান অন্যত্র হইতে সংগ্রহচেষ্টা বৃথা।

 আমি যে বহু প্রাচীনকাল হইতে শ্রেষ্ঠতম মহাজনগণের প্রদত্ত ধনরত্নের মালিক,—ইহা ভুলিয়া গেলে আমাকে কৌপিনসার ভিখারী সাজিতে হইবে,—আমার জন্য খষিগণ ঋক্‌মন্ত্র উচ্চারণ করিতেছেন বাক্য ও মন যাঁহার সম্মুখীন হইতে যাইয়া ফিরিয়া আসে,—যিনি অবাঙ্‌মানসগোচর, সেই নিখিল বিশ্বের হেতুভূত ব্রহ্মতত্ত্ব বেদান্তকারগণ আমার জন্য এখনও সম্মুখে আনিয়া দিতেছেন, আমার জন্য রামায়ণের অপূর্ব্ব ত্যাগশীলতার চিত্র বাল্মীকি অমর অক্ষরে লিপিবদ্ধ করিয়াছেন,—ব্যাস তাহার বিরাট গ্রন্থ সঙ্কলন করিয়াছেন,—কালিদাস, ভবভূতি সৌন্দর্য ও প্রেমের আদর্শ রচনা করিয়াছেন—এই বহুধনরত্ন লইয়া প্রাচীন ইতিহাসের পেটিকা আমার নিকট উন্মোচিত-আবরণ হইয়া প্রতীক্ষা