পাতা:ঐতিহাসিক চিত্র (প্রথম বর্ষ) - নিখিলনাথ রায়.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 ঐতিহাসিক চিত্ৰ। পত্রে পাওয়া যায়। লোকশিক্ষার জন্য, সদ্ধৰ্ম্মকথা প্রচারউদ্দেশ্যে আমাদের পুরাণকারের তিনটি উপায় অবলম্বন করিয়াছিলেন। ১। ইতিহাসপূৰ্ব্বানুবৃত্তি। ২। আখ্যায়িকা। ৩। উপাখ্যান। পূর্বে যে ঘটনা ঘটিয়া গিয়াছে, তাহার অনুবৃত্তি এমন ভাবে করিতে হইবে, যাহা শ্ৰবণ করিয়া লোকে বিনয়, সৌজন্য, সাধুতা, ভক্তি, সদাচার ও কৰ্ম্মনিষ্ঠ শিখিতে পারে। আধুনিক রাজনীতির মাপকাটি লইয়া হিসাব করিলে দুৰ্য্যোধন এক জন বড় রাজা ; ভারবী তাহার যে পরিচয় দিয়াছেন, মহাভারতের বনপর্বে র্তাহার যে পরিচয় পাই, তাহাতে দুৰ্যোধনকে রাজনীতিবিদ্যায় নেপোলিয়ান বোনাপার্টির উপরেও আসন দিতে ইচ্ছা হয়। কৰ্বারকুলপতি রাবণ অদ্বিতীয় পুরুষ ছিলেন ; অসাধারণ জ্ঞানী, অসাধারণ পণ্ডিত, অসাধারণ প্ৰজাপালক এবং অসাধারণ বীর ছিলেন। কিন্তু কি রাবণ, কি দুৰ্য্যোধন উভয়েই সমাজদ্রোহী ছিলেন। অভিমানী দুৰ্য্যোধন, নিজের কুলনারী বিবস্ত্ৰা দ্ৰৌপদীকে উরু দেখাইয়া সমাজদ্রোহিতার পরাকাষ্ঠা করিয়াছিলেন। মহাপ্ৰাজ্ঞ রাবণ ভিতরের কথা না বুঝিয়া, তদন্ত না করিয়া, অতিদৰ্পে অন্ধ হইয়া বনাচারী রামের নারী হরণ করিয়াছিলেন। রাজার পক্ষে ইহা অপেক্ষা অধিকতর সমাজদ্রোহিতা সম্ভব নহে। পুরাণকার এই দুইটী কথা-সমাজধৰ্ম্মের কথা, অতি বিশদ ভাবে বুঝাইয়া দিয়াছেন। তাই রামায়ণ ও মহাভারত মহাকাব্য হইলেও উহা হিন্দুর দৃষ্টিতে পুরাণেতিহাস । জাতির কথা বলিতে গেলে, যাদবকুলের কথা মনে পড়ে। যাদবের দৰ্প দম্ভ, যাদবের তেজ বিক্রম কেবল ভারতের পক্ষে কেন, সমগ্ৰ পৃথিবীর পক্ষে যেন অসহ্য হইয়াছিল। . যত বড় বুদ্ধিমান তুমি হওনা কেন, যত বড় তেজস্বী ও কৰ্ম্মী তোমার জাতি হউক না কেন, বিলাস যাহার ভিত্তি, রক্তমাংসের দেহ যাহার ভিত্তি, তাহা কখনই-কিছুতেই চিরস্থায়ী হইতে পারে না। যাদবকুলও চিরস্থায়ী হয় নাই। নিজের অহঙ্কারের তেজে নিজেই পুড়িয়া মরিয়াছিল। পুরাণ এই কথা আমাদিগকে স্পষ্ট করিয়া বলিয়াছেন । ইতিহােস কথার আবৃত্তি করিতে হইলে হিন্দু একটা কথা কখনও ভুলেন না,